ছবি প্রতীকী।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর দল যখন আস্ফালন করছে, তখন মনমোহন সিংহের জমানায় ‘আরও বড় সেনা হামলা’কে সামনে রেখে এ বারে মাঠে নামল কংগ্রেস। দলের দাবি, দুই ভারতীয় সেনার মুণ্ড কেটে নিয়ে যাওয়ার বদলা হিসেবে ওই হামলায় তিন পাক সেনার মুণ্ড কেটে এনেছিলেন ভারতীয় জওয়ানেরা।
২০১১ সালের জুলাই মাসে জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারায় পাকিস্তানি ‘বর্ডার অ্যাকশন টিম’ ভারতীয় পোস্টে আকস্মিক হামলা করে দুই জওয়ানের মুণ্ড কেটে নিয়ে যায়। তার বদলা হিসেবে ভারতীয় সেনা আট ঘাট বেঁধে সেই বছরেরই অগস্টের শেষে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করে পাক সেনার উপরে হামলা চালায়। সে সময় তিন পাকিস্তানি সেনার মুণ্ড কেটে নিয়ে আসেন ভারতীয় জওয়ানেরা। এক সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশের পর কুপওয়ারার তৎকালীন জিওসি (জেনারেল অফিসার ইন কম্যান্ড) এবং এই অপারেশনের দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এস কে চক্রবর্তী এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের হামলার বদলা নেওয়ার জন্যই এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করা হয়েছিল।”
সাম্প্রতিক সেনা অভিযানের পর থেকে মোদীর দল ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে যে ভাবে আস্ফালন শুরু করেছে, তাতে ২০১১-র সেনা অভিযানের ঘটনা সামনে আসাটা বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে কংগ্রেসকে। বিশেষ করে রাহুল গাঁধীর ‘খুনের দালালি’ মন্তব্যের পর বিজেপি নেতৃত্ব কর্মীদের যে ভাবে তাতাচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাহুলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে, তা মোকবিলায় হাতে নতুন অস্ত্র পেয়েছে কংগ্রেস। সেনার কৃতিত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমে কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি আজ তাই বলেছেন, “২০১১ সালে তো ভারতীয় সেনা তিন জন পাকিস্তানি সেনার মুণ্ড কেটে নিয়ে এসেছিল। এ বারে কত জনের মুণ্ড এনেছে ভারতীয় সেনা?”
কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, “কংগ্রেসের জমানাতেও ভারতীয় সেনা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছে। কিন্তু সেটার রাজনৈতিক কৃতিত্ব দাবি করে ঢাক পেটানোর প্রয়োজন মনে করেনি।’’ আজ লখনউতে বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছেন, “ভারতীয় সেনার অভিযান নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী। সে কারণেই দশমীতে লখনউ আসছেন তিনি।”
বিরোধীরা যতই সমালোচনা করুক, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দু’দিন আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সেনার কৃতিত্ব ও নরেন্দ্র মোদীর ‘দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি’ নিয়ে তাঁরা প্রচার করবেনই। অষ্টমীর সকালে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে দীনদয়াল উপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রকাশ অনুষ্ঠানে খোদ প্রধানমন্ত্রীও ইঙ্গিতে বলেছেন, “সকলকে দশমীর শুভেচ্ছা। আর এ বারের দশমী একটু খাস।”
প্রধানমন্ত্রী বিশদে কিছু না বললেও উপস্থিত অতিথিরা প্রায় আধ মিনিট ধরে হাততালি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, অশুভের বিরুদ্ধে শুভশক্তির জয় বোঝাতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের প্রসঙ্গ টেনেছেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রী মুখে অবশ্য এ দিনও সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনেরই দাওয়াই দিয়েছেন। বলেছেন, সেনাকে আরও শক্তিশালী হতে হবে। কিন্তু তা নিয়ে প্রতিবেশীর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাঁর কথায়, ‘‘সকালে উঠে কেউ যদি ব্যায়াম করেন, সেটি তাঁর নিজের জন্য। প্রতিবেশীকে ভয় দেখানোর জন্য নয়।’’ এই অনুষ্ঠানেই মোদীর প্রশংসা করে তাঁর বিদেশনীতি ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলায় সিলমোহর বসান আরএসএসের অন্যতম শীর্ষ নেতা ভাইয়াজি জোশী।
বার্তা স্পষ্ট, ইউপিএ জমানায় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে এখন মুখ খুলে কংগ্রেস যতই কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করুক, টাটকা অভিযানে সওয়ার হয়েই সঙ্ঘ ও বিজেপি উত্তরপ্রদেশে ভোটের মুখে লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাবে। কারণ, ‘অচ্ছে দিন’ না আসা, অর্থনীতির বেহাল দশা, দলিত-সাম্প্রদায়িক বিতর্কে একমাত্র প্রলেপ দিতে পারে সঙ্ঘ-বিজেপির জাতীয়তাবাদের হাওয়া। আর সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে ভর করাই তার সেরা উপায়। বিজেপির এক নেতার কথায়, “আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি, সেনা অতীতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেনি। কিন্তু এটিকে প্রকাশ্যে এনে গোটা দুনিয়ায় পাকিস্তানকে একঘরে করার ক্ষমতা এক মাত্র নরেন্দ্র মোদীরই আছে। আজ সেনা অভিযানের কথা প্রকাশ্যে এনেও গোটা দুনিয়ার সমীহ তিনিই আদায় করতে পারেন। ফলে অবশ্যই তা নিয়ে দল প্রচার করবে। কংগ্রেস তাদের জমানায় এই দাপট দেখাতে পারেনি। এখন মোদীর দেখাদেখি বলছে বটে, কিন্তু পুরনো কাসুন্দি ঘেটে লাভ কী?”