মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্র মোদী ফাইল চিত্র।
বুধবার মুম্বইয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইউপিএ-র ‘অস্তিত্বহীনতা’র প্রসঙ্গ তোলার জেরে বৃহস্পতিবার রাজধানী সরগরম। সকাল থেকে কংগ্রেস বিভিন্ন ভাবে সমালোচনা করেছে মমতা এবং তাঁর মন্তব্যের। অন্য দিকে তৃণমূলের সাংসদেরা দলনেত্রীর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাঁদের মতো করে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, সংসদ চত্বরে যখন রাজ্যসভার ১২ জন সাংসদের সাসপেনশন নিয়ে সমস্ত বিরোধী দলের ধর্নার চিত্রটি চাপে ফেলছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে, তখন এ হেন বিতর্ক অনভিপ্রেত ছিল। রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, এই পরিস্থিতিতে আসলে সুবিধা হচ্ছে বিজেপিরই। চিত্রনাট্য তৈরি হচ্ছে কংগ্রেস বনাম তৃণমূলকে নিয়ে। যা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কোনঠাসা মোদী সরকারের কাছে স্বস্তির কারণ।
আজ মমতাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে তাঁর সঙ্গী মোদীর তুলনা টেনে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘মোদীজি বিধায়ক কেনেন, মমতাজিও বিধায়ক কেনেন। মোদীজি দল ভাঙেন, মমতাজিও দল ভাঙেন।’’ সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, মমতাজি ২০১২ সালে ইউপিএ জোট ছেড়ে দিয়েছেন। তা হলে কেন ৯ বছর পরে ইউপিএ নিয়ে কথা বলছেন? বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কেন্দ্রে রয়েছে কংগ্রেস। সেই কেন্দ্রকে দুর্বল করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না। আদর্শের জন্য লড়াই এবং রাজনৈতিক সুবিধাবাদের মধ্যে ফারাক রয়েছে।’’ এই প্রসঙ্গে মমতা কবে বিজেপির সঙ্গে এবং কবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছেন এবং ভেঙেছেন, সেই কালপঞ্জিও বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন রণদীপ।
রণদীপের মতো চড়া সুরে না হলেও এ দিন ঘুরিয়ে মমতাকে আক্রমণ করে কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, “আমাদের লড়াই শাসক দল বিজেপির সঙ্গে। যাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে চান, তাঁদের স্বাগত। কেউ যোগ দিতে চান না। সে-ও ভাল কথা। সেই স্বাধীনতা তাঁদের রয়েছে। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও জোট কি গড়া সম্ভব কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে?” প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল ইউপিএ-র প্রসঙ্গে টুইট করে বলেছেন, “কংগ্রেসকে বাদ দিলে ইউপিএ শুধু মাত্র একটি শরীর, যার আত্মা নেই। সময় এসেছে বিরোধী ঐক্য দেখানোর।” পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতা তথা কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী আরও তীব্র তোপ দেগে বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি জানেন না ইউপিএ কী বস্তু? আমার মনে হয় তাঁর উন্মাদদশা শুরু হয়েছে। উনি মনে করছেন, গোটা দেশ ‘মমতা মমতা ধ্বনি’ তুলছে! কিন্তু ভারত মানে বাংলা নয়। এবং শুধু মাত্র বাংলা মানেই ভারত নয়।” কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা তো বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিরোধীদের উচিত নয় বিভক্ত হওয়া বা নিজেদের মধ্যে লড়াই করা। আমাদের এক সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে হবে।”
অন্য দিকে, মমতার মন্তব্যকে ব্যাখ্যা করতে তৃণমূল সক্রিয় হয়েছে রাজধানীতে। দুপুরে সুস্মিতা দেব এবং শান্তা ছেত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ বস্তুনিষ্ঠ মন্তব্য। ইউপি-এ তৈরি হয়েছিল ২০০৪ সালে, নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে। উদ্দেশ্য ছিল, সরকার তৈরি করা। ২০১৪ সালের পর নতুন সরকার এসেছে। স্বাভাবিক ভাবেই ইউপিএ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।” পাশাপাশি পরিসংখ্যান তুলে ধরে ডেরেক বলেছেন, “ইউপিএ-র শরিকদের আসন সংখ্যা ক্রমশ কমে গিয়েছে। কংগ্রেস দেড়শো থেকে পঞ্চাশে, বামেরা ষাট থেকে ছয়ে, আরজেডি পঁচিশ থেকে শূন্যে নেমেছে। ফলে ইউপিএ-র কোনও রাজনৈতিক তাৎপর্যও নেই।” খড়্গে-সহ বিপক্ষদের আজকের আক্রমণের জবাবে তৃণমূল নেতার মন্তব্য, বিভিন্ন রাজ্যে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, কংগ্রেস তাদের বিধায়কদের ধরে রাখতে পারে না। সে সব ক্ষেত্রে তো তৃণমূলকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। বিজেপির বিরুদ্ধে যেখানে যে শক্তিশালী, সে-ই লড়বে।