রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ কপিল সিব্বল। মঙ্গলবার।
একই সঙ্গে কী ভাবে বাজারে চালু রয়েছে দু’রকমের নতুন ৫০০ টাকার নোট। নতুন ২০০০ টাকার নোট। দু’রকম চেহারার! দু’ধরনের নকশার! এই নিয়ে তুমুল বাদানুবাদে মঙ্গলবার তোলপাড় হয়ে গেল সংসদের দুই কক্ষ। মুলতুবিও হয়ে গেল রাজ্যসভার অধিবেশন, এ দিনের জন্য।
কংগ্রেসের তরফে প্রশ্ন তোলা হল, কী ভাবে একই সঙ্গে দু’রকমের নতুন ৫০০ টাকার নোট বাজারে চালু রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক? যারা আকারে ও নকশায় একেবারেই আলাদা। কংগ্রেসের রাজ্যসভা সদস্য কপিল সিব্বলের কথায়, ‘‘এখন বুঝতে পারছি, সরকার (মোদী সরকার) কেন নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গত নভেম্বরে। নোটবন্দির পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দু’রকমের ৫০০ টাকার নোট ছাপিয়েছে। দু’রকমের নতুন ৫০০ টাকার নোট বাজারে ছেড়েছে। যাদের আকার ও নকশা একেবারেই আলাদা। এটা কী ভাবে সম্ভব? এটাই তো দেশের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি।’’
সিব্বলের বুকে ঝোলানো ছিল দু’রকমের নতুন ৫০০ টাকার নোট সাঁটা একটি প্ল্যাকার্ড। সিব্বল দিয়ে শুরু। তার পর সরব হন বাকি কংগ্রেস সাংসদরাও। সরব হয় অন্য বিরোধী দলগুলিও। এর আগেও দু’রকম চেহারা ও দু’রকম নকশার নতুন ৫০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল।
অভিযোগ, বাজারে চালু এই দু’রকমের নতুন ৫০০ টাকার নোট। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় এই অভিযোগ কংগ্রেস সাংসদ কপিল সিব্বলের
কংগ্রেসের আর এক রাজ্যসভা সদস্য গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘আমাদের জমানায় কখনও এমন দু’রকমের নোট ছাপানো হয়নি। এ বার সেটাই হয়েছে। দু’ধরনের নতুন ৫০০ টাকার নোট। দু’রকমের নতুন ২০০০ টাকার নোট। এক ধরনের নোট দলের (পড়ুন, বিজেপি) জন্য। অন্যটি সরকারের জন্য! এতে মানুষের কতটা উপকার হয়েছে, তা মানুষই বলবেন! তবে বিজেপি’র তহবিল ভরছে, সন্দেহ নেই!’’
আরও পড়ুন- ২২ অগস্ট দেশ জুড়ে ধর্মঘট ডাকল ৯টি ব্যাঙ্ক
আরও পড়ুন- এসপিজি-র পরামর্শ রাহুল মানেননি: রাজনাথ সিংহ
সিব্বল, আজাদের তোপের মুখে ‘অগ্নিশর্মা’ হয়ে ওঠেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও মর্যাদাহানিকর মন্তব্য’-এর জন্য তিনি কংগ্রেস সাংসদদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। জেটলি বলেন, ‘‘সভায় যে কোনও একটা বিষয় সভায় উত্থাপন করে তাকে পয়েন্ট অফ অর্ডার বলা যায় না। নতুন নোট নিয়ে সভায় দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা হচ্ছে। সভার ‘জিরো আওয়ার’-এর সময় নষ্ট করা হচ্ছে।’’
অর্থমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পর সভায় আরও সরব হন বিরোধীরা। সিব্বল, আজাদের সমর্থনে বলতে শুরু করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, সংযুক্ত জনতা দল নেতা শরদ যাদব ও সমাজবাদী পার্টির সাংসদ নরেশ অগ্রবাল। কংগ্রেসের বক্তব্যের সমর্থনে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘নোটগুলির দিকে তাকান। দেখুন কী কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। সিব্বল তো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলেছেন।’’
বিরোধীদের সমালোচনার সুর চড়ছে দেখে এমন দু’ধরনের নোট কোথা থেকে আনা হল, সেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নাকভি।
আরও পড়ুন- ভারতে সফল অস্ত্রোপচার, পাকিস্তানে ফিরে মারা গেল ছোট্ট রুহান
সভার বাইরে অর্থমন্ত্রী জেটলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘নোটগুলি জাল কি না আমাকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এত বেশি সংখ্যায় নোট ছাপানো হয়েছে, তাতে যান্ত্রিক ত্রুটিতে সামান্য ছোট, বড়, দু’ধরনের নোটই বাজারে এসে যেতে পারে। তবে এটা কোনও নিয়ম নয়, ব্যাতিক্রম।
পরে অর্থমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়, নোট যন্ত্রে ছাপানো হয়। তাতে সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি কখনও হয়ে যেতে পারে। সামান্য ছোট, বড় হতে পারে নোটগুলি। তবে এমন দু’রকমের, দু’ধরনের চেহারার নোট বাজারে আনার ব্যাপারে সরকারের তরফে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এগুলি হয় প্রিন্টিং প্রেসের ভুলভ্রান্তির জন্য। কোনও একটা প্রিন্টিং প্রেসে তো নোটগুলি ছাপানো হয় না। বিভিন্ন প্রেসে ছাপানো হয়, নানা মেশিনে।