ফাইল চিত্র
শিক্ষার বিষয়টি সংবিধানে যৌথ তালিকায় থাকা সত্ত্বেও বুধবার একতরফা ভাবে কেন কেন্দ্র জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সংসদকে কেন সরকার এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিল, তা নিয়েও সরব হয়েছেন তাঁরা।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণার পরে সিপিএম একটি বিবৃতিতে অভিযোগ করে, ‘বিজেপি সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং বাণিজ্যিকরণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।’ আজ দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি অভিযোগ করেন, সংবিধানে শিক্ষাকে রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ তালিকায় রাখা হলেও একতরফা ভাবে কেন্দ্র এই নীতি ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন রাজ্য সরকার এই নীতির বহু বিষয়ে আপত্তি করেছিল। তাকে আমলই দেয়নি মোদী সরকার। আবার শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাবিদেরা নানা বিষয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার একটিও বিবেচনা করা হয়নি। ইয়েচুরির অভিযোগ, সংসদে আলোচনাতেও বিশ্বাসী নয় কেন্দ্র। তাই সংসদের বাইরে তারা শিক্ষানীতির ঘোষণা করেছে। শেষ প্রসঙ্গটি নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন কংগ্রেসের কেরলের সাংসদ এবং সাবেক ইউপিএ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী শশী তারুরও। তাঁর কথায়, ১৯৮৬- র পরে শিক্ষানীতিতে বদল আনতে চাওয়াটা একটা বিরাট পদক্ষেপ। বিজেপি সরকার যে ঘোষণা করেছে, তাতে অনেক কিছুই স্বাগত জানানোর আছে। কিন্তু যে ভাবে সংসদকে এড়িয়ে এই নীতি ঘোষণা করা হল, তাকে সমর্থন করা যায় না। তারুরের প্রশ্ন, “সংসদের আলোচনাকে এত ভয় কেন বিজেপি সরকারের?”
তারুর বলেছেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী হয়ে তিনিও উঠেপড়ে লেগেছিলেন জাতীয় শিক্ষানীতিকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করে তুলতে। ১৯৮৬-তে শেষ বার সরকার একটা শিক্ষানীতি ঘোষণা করেছিল। তার পরে কত সরকার এসেছে-গিয়েছে, তারা শুধু নামমাত্র ফেরবদল করে সেই ব্যবস্থাটাই ধরে রেখেছেন। টুইটে তারুর বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় প্রতিটি সরকার জিডিপি-র অন্তত ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যবহারের পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু বছরের শেষে সে পথে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় অর্থ মন্ত্রক।’ তবে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার যে শিক্ষাখাতে ব্যয়বরাদ্দ প্রতি বছর পরিকল্পনা করেই কমিয়ে চলেছে, সেই তথ্যও তিনি দেন।
ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি অভিযোগ করেন, বিজেপি সরকারের নতুন শিক্ষানীতি আসলে আরএসএসের সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি বাস্তবায়ন। এটা সব রাজ্যে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ডিএমকে সাংসদ বলেন, “আমি আশা করব, তামিলনাড়ু সরকার এই শিক্ষানীতি খারিজ করবে। কী বিদ্যালয়ের পড়ুয়া কী উচ্চশিক্ষার পড়ুয়া— এই নীতিতে কারও উপকার হবে না।” আবার অন্ধ্র্প্রদেশের বিরোধী নেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতে, নতুন শিক্ষানীতির মধ্যে সব চেয়ে ভাল বিষয়টি হচ্ছে, কোনও বিশেষ ভাষাকে সবার উপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়নি। তেলুগু দেশম নেতা বলেন, “আশা করব, নতুন নীতিতে পড়ুয়ারা আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় উন্নত দেশগুলির পড়ুয়াদের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারবে।”