প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড়। ফাইল চিত্র।
মোদী সরকারের আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের জামিনের আর্জি শোনার প্রয়োজন নেই।
প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড় আজ সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন—ব্যক্তিগত স্বাধীনতা লঙ্ঘন হলে যদি তাঁরা হস্তক্ষেপ না করেন, সুরাহার ব্যবস্থা না-করতে পারেন, তা হলে তাঁরা আদালতে কী করতে বসে রয়েছেন? সংবিধানের ১৩৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের যে এই অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টে কেন লম্বা ছুটি থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন আইনমন্ত্রী। আজ প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছেন, নির্ধারিত শীতকালীন ছুটি অনুযায়ী শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে কোনও বেঞ্চ বসবে না।
সরাসরি কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রসঙ্গ না তুললেও প্রধান বিচারপতির এই দুই মন্তব্যকে আইনজীবীরা মোদী সরকারের প্রতি বার্তা হিসেবেই দেখছেন। কারণ বেশ কিছু দিন ধরেই আইনমন্ত্রী নিয়মিত বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম ব্যবস্থার সমালোচনা করছেন। পুরনো মামলার পাহাড় জমে থাকার জন্যও বিচারপতি নিয়োগের সমস্যাকে দায়ী করেছেন। মামলার পাহাড় জমে রয়েছে বলে রিজিজুর প্রস্তাব— জামিনের আর্জি, তুচ্ছ বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা শোনার প্রয়োজন সুপ্রিম কোর্টের নেই।
আজ প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় সুপ্রিম কোর্টে একটি জামিনের আর্জি শুনছিলেন। বিদ্যুৎ চুরির অপরাধে অভিযুক্ত এক জনের তিন বছর জেল খাটা হয়ে গিয়েছে। আরও ১৫ বছর জেল খাটা বাকি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কাছে কোনও মামলাই তুচ্ছ নয়। তাঁর বক্তব্য, “আমরা যদি ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করি, সুরাহা না দিই, তা হলে আমরা এখানে কী করছি? সুপ্রিম কোর্ট কিছু না করে সেটা কি সংবিধানের ১৩৬-তম অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন নয়? এই ধরনের আবেদনকারীর আর্জি শোনার জন্যই সুপ্রিম কোর্ট রয়েছে। আমরা এইরকম মামলার জন্যই রাত জেগে থাকি।”
আজ কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক সংসদে একটি প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে এখন ৪৯৮টি সাংবিধানিক মামলা, ৪৮৭টি নির্বাচনী মামলা, ২২০৯টি রিট পিটিশন, ২৮৭০টি জনস্বার্থ মামলা ও হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া ৪,৩৩১টি মামলা ঝুলে রয়েছে। এই বকেয়া মামলার পাহাড় নিয়েই আইনমন্ত্রী সংসদে প্রশ্ন তোলেন— সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টে কেন লম্বা ছুটি থাকবে? তাতে কান না-দিয়ে প্রধান বিচারপতি আজ জানিয়ে দিয়েছেন, শীতকালীন ছুটি যেমন ছিল, তেমনই থাকবে।
প্রবীণ আইনজীবী ও রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বল বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক হল, আমাদের এমন এক আইনমন্ত্রী রয়েছেন যিনি আইনও জানেন না, বিচারপতিরা কত খানি কাজ করেন, তা-ও জানেন না।” কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, “আইনমন্ত্রী কি কখনও খোঁজ নিয়েছেন বিচারপতিরা ছুটির সময়ে বা সপ্তাহান্তে কী করেন? তাঁরা রায় লেখেন না গল্ফ খেলেন? পেশায় নতুন আসা উকিলও এর উত্তর জানেন।”