মুখতার আব্বাস নকভি। ছবি পিটিআই।
‘‘মানুষ কে কী খাবেন, সেটা বলা মোটেই সরকারের কাজ নয়।’’
বক্তা মুখতার আব্বাস নকভি। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী।
শনিবারই দেশে ক্রমাগত বেড়ে চলা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, হিংসা, একের পর এক গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একযোগে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন সনিয়া গান্ধী-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-শরদ পওয়ার-এম কে স্ট্যালিন-সীতারাম ইয়েচুরি-সহ ১৩টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই চিঠিতে মোদী সরকারের আমলে দেশে ক্রমাগত বেড়ে চলা ধর্মীয় হিংসার পরিবেশ, সংখ্যালঘু নির্যাতন-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন তাঁরা। তার পরেই মোদী সরকারের তরফে বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে দিতে আসরে নামেন কয়েক জন মন্ত্রী। এরই মধ্যে একটি সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নকভি দাবি করেন, নিজেদের ধর্মবিশ্বাস পালন করার স্বাধীনতা রয়েছে ভারতীয়দের। সংখ্যালঘুদের উপরে ক্রমশ বেড়ে চলা নির্যাতনের অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। এমনকি হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবের সময় গোমাংস তো বটেই, আমিষ খাওয়ার উপরেও বিভিন্ন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের জারি করা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে উপেক্ষা করে নকভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘কে কী খাবেন বা খাবেন না, তা বলা সরকারের কাজ নয়। এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনতা রয়েছে নিজেদের পছন্দের খাবার খাওয়ার।’’
বিরোধীরা তো বটেই, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী-সহ অনেকেই বলছেন, নকভি এ দাবি করলেও তা মোটেই সঠিক নয়। শুধু মাত্র গত ৮ বছরে গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ দলিত এবং সংখ্যালঘুদের উপরে একের পর এক অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। একাধিক সংখ্যালঘু মারও খেয়েছেন উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে। সামাজিক মাধ্যমে তার অনেকগুলির ছবি গোটা পৃথিবী দেখেছে। এক কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘নিজের মন্ত্রিত্ব বাঁচাতে নকভি সরাসরি মিথ্যে বলেছেন। মোদী জমানায় এ দেশের মানুষ কী খাবেন, কী পরবেন, সবই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এরা সকলেই বিজেপির ঘনিষ্ঠ। এবং এদের কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার এদের প্রত্যক্ষ ভাবে মদত দিচ্ছে।’’
বিরোধীদের এই অভিযোগ সমর্থন করছে গত ৮ বছরের নানা ঘটনা এবং তথ্য। শুরুটা হয়েছিল মোদী ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই। কখনও গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ মুসলিমদের মারধর, কখনও গোমাংস বহনের ‘অপরাধে’ দলিতদের মারধর। বছরখানেকের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ এক মুসলিম ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে। সেই শুরু। তার পরে বিজেপি-শাসিত গুজরাত-উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানা-মধ্যপ্রদেশ-বিহারে এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। অতি সম্প্রতি রামনবমীর মধ্যে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের খাবারে আমিষ পরিবেশন নিয়ে আপত্তি তুলে একাধিক পড়ুয়াকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র বিরুদ্ধে। তার পরপরই হরিয়ানার একাধিক এলাকা এবং দিল্লির কয়েকটি পুর এলাকায় রামনবমী উপলক্ষে আমিষ খাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। রামনবমীর মিছিল নিয়ে মসজিদের সামনে উত্তেজক স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ এবং তাকে ঘিরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে একাধিক রাজ্যে। গত কাল হনুমান জয়ন্তীর মিছিল থেকেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে দিল্লি, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে। একের পর এক ঘটনায় অসহিষ্ণুতা এবং বিভাজনের রাজনীতির দিকেই বারবার আঙুল উঠেছে। এই অবস্থায় মনকভি যা-ই দাবি করুন, তা মানতে নারাজ অনেকেই।
হিজ়াব পরার বিরুদ্ধে কর্নাটকে হিন্দুত্ববাদীদের প্রচার এবং সে রাজ্যের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীর হিজ়াব পরা ঘিরে নিষেধাজ্ঞা-অশান্তি প্রসঙ্গে মুখ খুলে নকভি দাবি করেছেন, ‘‘ভারতে হিজ়াব পরায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। যে কেউ বাজারে বা অন্যত্র হিজ়াব পরতেই পারেন। তবে প্রতিটি কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পোশাকবিধি রয়েছে। আমাদের তা মানতে হবে। পছন্দ না হলে আপনি অন্য প্রতিষ্ঠানে যেতেই পারেন।’’