ভারতে চিনের বিদেশমন্ত্রী, সমঝোতা সহজ নয়, তবু চেষ্টা চালাবে দু’পক্ষই

ভারত-চিন সম্পর্কের কূটনৈতিক বারবেলায় আবার নতুন করে ‘ঐকমত্য’ সন্ধানের চেষ্টা শুরু করতে চলেছে দু’দেশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৫
Share:

ওয়াঙ্গ ই

ভারত-চিন সম্পর্কের কূটনৈতিক বারবেলায় আবার নতুন করে ‘ঐকমত্য’ সন্ধানের চেষ্টা শুরু করতে চলেছে দু’দেশ।

Advertisement

চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াঙ্গ ই তাঁর তিন দিনের ভারত সফরের প্রাক্কালে বার্তা দিয়েছেন, দু’দেশের মধ্যে ঐকমত্যের জায়গাগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং পারস্পরিক সমঝোতার ক্ষেত্র মজবুত করার চেষ্টা করতে হবে। ওয়াঙ্গ-এর সফরের ঠিক পরেই আগামী মাসে চিনে জি-২০ সম্মেলন। আর তারপরেই অক্টোবর মাসে গোয়াতে ব্রিকস সম্মেলন। এই দু’টি বহুপাক্ষিক সম্মেলনেই থাকবেন ভারত এবং চিনের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁদের মধ্যে পার্শ্ব বৈঠকও হওয়ার কথা। অর্থাৎ আগামী তিন মাস ভারত এবং চিনের সমঝোতা এবং বিভিন্ন বিষয়ে আদানপ্রদানের একটি সরকারি কাঠামো তৈরি করার চেষ্টা হবে দু’দেশের পক্ষ থেকে। দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের ওই বৈঠকের আগে আগামিকাল থেকে শুরু হওয়া বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের এই আলোচনা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘‘আলোচনা হবে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো নিয়ে।’’

কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এই ঝঞ্ঝাবহ পরিবেশের মধ্যে সমঝোতার সুর রচনা করার বিষয়টি খুব সহজ কাজ নয়। এ কথাও বলা হচ্ছে যে, ভারত ও চিনের সম্পর্কের এটিই তো স্বাভাবিক ঘটনা। মতানৈক্যের জায়গাগুলো সব সময়ই থাকবে, তা নিয়ে পারস্পরিক কঠিন পদক্ষেপ নেওয়াও হবে, কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার (মূলত বাণিজ্য) চাকাটিকে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করা হবে।

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ওয়াঙ্গ তাঁর সফরে ব্রিকস-এর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দিল্লি থেকে গোয়া যাবেন। ব্যাপারটি কূটনৈতিক বৃত্তে নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ একটি ঘটনা। অক্টোবরের মাঝামাঝি গোয়াতে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে আসছেন চিনের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু দু’মাস আগে সে দেশের বিদেশমন্ত্রী সম্মেলন-শহরটি পরিদর্শনে যাবেন, এমন সচরাচর হয় না। দিল্লিতে অবস্থিত চিনের দূতাবাসের পক্ষ থেকেই সেটা করার রেওয়াজ। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি সম্মেলন স্থলের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দিগ্ধ চিনা নেতৃত্ব? গতবার চিনা প্রেসিডেন্টের সফরের সময় হায়দরাবাদ হাউসের খুব কাছেই বিক্ষোভ দেখিয়েছিল বিক্ষুব্ধ তিব্বতি সংগঠন। ভারত অবশ্য বিষয়টিকে লঘু করতে চাইছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের কথায়, ‘‘গোয়া খুবই সুন্দর জায়গা! চিনের বিদেশমন্ত্রী সেখানে যেতে চেয়েছেন। তিনি সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এক জন মন্ত্রী। আমাদের আপত্তি করার কোনও কারণ নেই।’’

ইতিমধ্যেই চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনইয়াং জানিয়েছেন, ‘‘বিদেশমন্ত্রী ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ঐকমত্য কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে কথা বলবেন। যে ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সে ভাবেই যাতে দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারষ্পরিক সহযোগিতা বজায় থাকে, সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করা হবে।’’

২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসার পরে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং ভারত সফরে আসেন। সে সময় দু’দেশের মধ্যে সবিস্তার কর্মসূচি তৈরি হয়। তার পরের বছর পাল্টা সফরে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে সে সময় যে ‘ঐকমত্যে’র বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়েছি্ল, তাতে বড় কোনও অগ্রগতি ঘটেনি। অগ্রাধিকার ছিল, চিনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতিকে কমিয়ে সে দেশে ভারতের রফতানি বাড়ানো। ওষুধ, কৃষিপণ্য, ডেয়ারি পণ্যের মতো বেশ কিছু সামগ্রী ভারত থেকে নিজেদের দেশে কার্যত ঢুকতে দেয় না চিন। নয়াদিল্লির দাবি ছিল, বাণিজ্য নীতির প্রশ্নে আমূল সংস্কার আনতে হবে। বিষয়টি যৌথ বিবৃতিতেও রাখা হয়।

কিন্তু গত ছ’মাস ধরে অরুণাচলপ্রদেশ, অনুপ্রবেশ বা পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে প্রাচীর তুলে দেওয়ার মতো বিবিধ বিষয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এতটাই উত্তপ্ত হয়ে থেকেছে যে, উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি হয়নি। ভারত এটা জানে যে, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে দক্ষিণ চিনা সাগর নিয়ে রায় ঘোষণার পরে যথেষ্ট কোণঠাসা বেজিং। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় শক্তি হিসেবে ভারতের সমর্থন তাদের প্রয়োজন। আবার, এনএসজি-তে অন্তর্ভূক্তির জন্য চিনের সিলমোহরও নয়াদিল্লির কাছে অত্যন্ত জরুরি।

পারস্পরিক নির্ভরশীলতার এই সমীকরণ দু’দেশের সম্পর্ককে কতটা সহজ করতে পারে, এখন সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement