ভারতে প্লে স্টোর ও অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে দেওয়া হল টিকটক।
৫৯টি অ্যাপ নিষিদ্ধ ঘোষণার পরের দিনই অফলাইন হয়ে গেল ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় চিনা অ্যাপ টিকটক। অ্যাপ খুললেই ভারতে এই অ্যাপ ব্লক সংক্রান্ত মেসেজ ভেসে উঠছে স্ক্রিনে। তবে শেয়ারইট, ইউসি ব্রাউজার, হেলো-র মতো অ্যাপ এখনও কাজ করছে বলে ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন। অন্য দিকে টিকটকের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ভারত সরকার তাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি, গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষিত রাখার আশ্বাসও দিয়েছে এই চিনা অ্যাপ সংস্থা।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাচ্ছে না এই অ্যাপ। তবে যাঁদের আগে থেকেই ডাউনলোড করা ছিল, তাঁদের ব্যবহার করতে কোনও অসুবিধা হচ্ছিল না। কিন্তু এ দিন দুপুরের পর থেকে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল, ট্যাব, ডেস্কটপ-সহ সমস্ত মাধ্যমে অফলাইন হয়ে যায় এই অ্যাপ। কোনও মাধ্যমেই আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অ্যাপ খুললেই ইউজারদের জন্য বার্তা ভেসে উঠছে— ভারত সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে। ভারতীয় ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও তথ্যের সুরক্ষাই আমাদের প্রাধান্য। পুশ নোটিফিকেশন হিসেবেও গ্রাহকদের মোবাইলে পাঠিয়ে এই বার্তা দিয়েছে সংস্থা।
ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়, সমাজে কুপ্রভাব পড়ছে, যৌনতাকে উস্কানি দেয়— এমন একাধিক অভিযোগে আগেও সাময়িক ভাবে ভারতে টিকটক ব্লক করা হয়েছিল। যদিও পরে আবার চালু করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, টিকটক ছাড়া বাকি অ্যাপগুলি এখনও প্লে স্টোর এবং অ্যাপ স্টোরে থেকে যাওয়ায়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার ৫৯টি অ্যাপের তালিকা দিলেও মূল টার্গেট কি টিকটক?
আরও পড়ুন: সাংবাদিক সেজে ঘুরছে চিনা স্পাই! কড়া নজরদারিতে রয়েছি আমরাও
আবার মন্ত্রকের নির্দেশিকা দেখে মনে করা হয়েছিল, অ্যাপগুলি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ দিন জানা যায়, এই ঘোষণা অন্তর্বর্তীকালীন। এই অ্যাপগুলির কাছ থেকে সরকার ব্যাখ্যা চেয়েছে। তত দিন পর্যন্ত এই অ্যাপগুলি বন্ধ থাকবে। তবে উপযুক্ত জবাব দিতে পারলে এবং সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিত আশ্বাস দিতে পারলে আবারও খুলে যেতে পারে এই অ্যাপগুলি। ফলে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের পর থেকে উত্তেজনার জেরে এই অ্যাপগুলি নিষিদ্ধ করা হলেও তা থিতিয়ে গেলে আবার সেগুলি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলেও মনে করছেন অনেকে।
টিকটকের তরফে অবশ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার বার্তাই দেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থার ভারতীয় প্রধান নিখিল গাঁধী জানিয়েছেন, তাঁদের বলা হয়েছে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য। সেই সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়ে গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
আরও পডু়ন: সরেনি চিন সেনা, উত্তেজনা কমাতে কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠক শুরু
ওই বিবৃতিতে নিখিল গাঁধী বলেছেন, ‘‘ভারত সরকার একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে টিকটক-সহ ৫৯টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করে ব্যাখ্যা চেয়েছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ব্যাখ্যা দিয়ে হবে আমাদের। ভারতীয় আইন অনুযায়ী তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা মেনে চলে টিকটক। ইউজারদের কোনও তথ্য চিন বা অন্য কোনও দেশের সঙ্গে শেয়ার করা হয়নি। তবু যদি এই বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে, আমরা সেটা আরও নিশ্ছিদ্র করব। আমরা সব সময়েই ইউজারদের তথ্যের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিই।’’
এর সঙ্গে আবার ভারতীয় আবেগ ও কর্মসংস্থানের বিষয়টিও জুড়ে দিয়ে সহানুভুতি আদায়ের চেষ্টা করেছেন টিকটক কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে নিখিল গাঁধীর বক্তব্য, ‘‘ভারতের ১৪টি ভাষায় টিকটক ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকে গণতান্ত্রিক করা হয়েছে। কোটি কোটি ইউজার, শিল্পী, গল্পকথক, শিক্ষক, পারফর্মার এর উপর নির্ভরশীল।’’ টিকটকে ভারতে কাজ করেন প্রায় ২ হাজার কর্মী। নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তে সেই কর্মীদের একটা বড় অংশও উদ্বিগ্ন। নিখিলের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘প্রায় ২০০০ কর্মী ভারত সরকারের সমস্ত নিয়মকানুন মেনে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।’’
তবে ওয়াকিবহাল শিবিরের মতে, ভারতের এই সিদ্ধান্তে টিকটকের মূল সংস্থা বাইটড্যান্স বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। ভারতের কয়েক কোটি ইউজার হারিয়ে কার্যত মাথায় হাত পড়েছে সংস্থার। তাই এখন সরকারের নির্দেশিকা মতো সমস্ত রকম সুরক্ষার প্রমাণ দিয়ে ভারতে এই ভিডিয়ো শেয়ারিং অ্যাপ চালু করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।