নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে, নাম না করে ভারতের ‘হস্তক্ষেপ’ বন্ধ করতে কাঠমান্ডুর উপর চাপ বাড়াল চিন। মধেসি বিক্ষোভ সামলাতে নেপালের রাজনৈতিক দলগুলি নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিক। অন্য কোনও দেশকে যেন নাক গলাতে না দেওয়া হয়। বিবৃতি দিয়ে নেপালের সরকারকে সতর্ক করল চিনের বিদেশমন্ত্রক। ঠান্ডা স্বরে ভারতের বার্তা, বিক্ষোভ না থামলে শুরু হবে না দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কায় উভয় সঙ্কটে নেপাল।
নেপালের আইনসভায় নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে দেশের দক্ষিণাংশে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ভারতের সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ নেপালের তরাই অঞ্চলে মূলত ভারতীয় বংশোদ্ভুত মধেসি সম্প্রদায়েরই বাস। নেপালের জনসংখ্যার বেশ বড় একটা অংশ তাঁরা। নতুন সংবিধানে তাঁদের উপযুক্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, দাবি মধেসিদের। এই বৈষম্যের প্রতিবাদেই উত্তপ্ত নেপালের গোটা তরাই অঞ্চল। গত দেড় মাস ধরে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে দক্ষিণ নেপালে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪০ জনের। এলাকার সমস্ত জাতীয় সড়ক বন্ধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। ফলে ভারত থেকে যে জ্বালানি তেল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস রোজ নেপালে যায়, তা গত দেড় মাস প্রায় বন্ধ।
পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নেপালের উপর ভারতের বিপুল প্রভাব খর্ব করতে চেয়েছে চিন। তিব্বত-নেপাল সীমান্ত বহু বছর পর খুলে দিয়েছে চিনের সরকার। সেই সীমান্ত দিয়ে নেপালকে রসদ সরবরাহ করছে বেজিং। নেপালের সরকারকে চিন জানিয়েছে, সব রকমভাবে নেপালকে সাহায্য করা হবে। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহের জন্য নেপালের সঙ্গে চিনের একটি চুক্তিও ইতিমধ্যেই হয়েছে। এই অবস্থায় নেপালকে ভারতের বার্তা, রসদ সরবরাহে কোনও আপত্তি নেই নয়াদিল্লির। কিন্তু নেপালের সংবিধানে মধেসিদের উপযুক্ত অধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, নেপালের তরাই অঞ্চলে মধেসি বিক্ষোভেই থমকে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। এই বিক্ষোভ না কমলে ভারতের পক্ষে পণ্যবাহী যানবাহন নেপালে পাঠানো সম্ভব নয়।
ভারত অসন্তুষ্ট হলেও চিন পাশে থাকছে। তাও কিন্তু স্বস্তিতে থাকতে পারছে না নেপাল। ভারতের সঙ্গে নেপালের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এতটাই বেশি যে হঠাৎ তা বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত দেড় মাসের বিক্ষোভে নেপালের অর্থনীতি বেশ ধাক্কাও খেয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে চিনের বন্দর ব্যবহার করে সামুদ্রিক বাণিজ্য করতে হবে নেপালকে। কাঠমান্ডু থেকে চিনা বন্দরগুলির দূরত্ব ভারতীয় বন্দরগুলির তুলনায় অনেক বেশি। ভৌগোলিক কারণেও চিনা বন্দর দিয়ে পণ্য আদানপ্রদান নেপালের পক্ষে অনেক বেশি খরচ সাপেক্ষ। তাই ভারতকে পুরোপুরি উপেক্ষা করাও সম্ভব নয় নেপালের পক্ষে। দুই মহাশক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে টানাপড়েনে এখন তাই ঘোর উভয় সঙ্কটে নেপাল।