এই চিহ্নিত করা ম্যাপের ছবিই টুইটারে শেয়ার করেছেন লাদাখের সাংসদ জেমিয়াং শেরিং নামগেল।
চিন প্রসঙ্গে গত কয়েকদিন ধরেই শাসক দলের নেতাদের আক্রমণ করে যাচ্ছেন রাহুল গাঁধী। কখনও রাজনাথ সিংহ, কখনও অমিত শাহ এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত প্রশ্ন করে যাচ্ছেন, ‘‘লাদাখে চিন কি ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশ দখল করে নিয়েছে?’’ কিন্তু তার জবাব মেলেনি বিজেপি তথা সরকারের তিন শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে। শেষ পর্যন্ত নিজের কাঁধেই উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব তুলে নিলেন লাদাখের সাংসদ জেমিয়াং শেরিং নামগেল। নিজস্ব স্টাইলে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, চিন ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করেছে!’’ কিন্তু ভারতের হাত থেকে সেই বেদখলের অতীত ইতিহাস তুলে ধরে কার্যত কংগ্রেসকেই বিপাকে ফেলতে চেয়েছেন তরুণ এই বিজেপি সাংসদ।
৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে আলাদা আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের সময় তাঁর নিজস্ব স্টাইলের ভাষণ সংসদে সবার নজর কেড়েছিল। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তো বটেই, তাঁর বাচনভঙ্গির প্রশংসা করেছিলেন বিরোধী সাংসদরাও। রাহুল গাঁধীর বারবার একই প্রশ্ন তোলা এবং আক্রমণের জবাবও দিলেন অভিনব স্টাইলে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষিতে দেওয়া আমার উত্তরে আশা করি রাহুল গাঁধী ও কংগ্রেস নেতৃত্ব সন্তুষ্ট হবেন এবং বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না।’’
অতীতে কোন কোন এলাকা চিন দখল করে নিয়েছে, তার একটি তালিকা ওই টুইটের সঙ্গে জুডে় দিয়েছেন। নির্দিষ্ট করে সেই সব ঘটনার কথা আলাদা করে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেগুলি সবই যে কংগ্রেস বা ইউপিএ জমানায় হয়েছিল, তাও উল্লেখ করেছেন নামগেল। তিনি লিখেছেন,
‘‘রাহুল গাঁধী: চিন কি ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করেছে?
জেমিয়াং শেরিং নামগেল: হ্যাঁ চিন নিম্নলিখিত এই এলাকাগুলি দখল করেছে।’’ তার পর সেই তালিকাও তুলে ধরেছেন।
• ১৯৬২ সালে আকসাই চিন দখল হয়েছে কংগ্রেসের জমানায়
• টিয়া প্যাংনাক এবং চাবজি উপত্যকা দখল হয়েছে ইউপিএ জমানায় ২০০৮ সালে
• ডেমজোক এলাকায় জোরাওয়ার দুর্গ ভেঙে দিয়েছিল চিনের সেনাবাহিনী বা পিপলস লিবারেশন আর্মি। সেটাও ২০০৮ সালে। তার পর ২০১২ সালে সেখানে নজরদার পয়েন্ট তৈরি করেছে চিন এবং তার পরে সেখানে ১৩টি পাকা বাড়ি তৈরি করে কলোনি বসিয়েছে চিন। সেই কলোনির নাম নিউ ডেমজোক। এর পুরোটাই হয়েছে ইউপিএ-র শাসনকালে।
• আবার ২০০৮-০৯ সালে ইউপিএ জমানাতেই ডুঙ্গটি ও জেমজোকের মাঝে প্রাচীন বাণিজ্যকেন্দ্র ‘ডুম চেলে’ হারিয়েছে ভারত।
এই ইতিহাসভিত্তিক তথ্যের পাশাপাশি একটি ম্যাপের ছবি শেয়ার করেছেন নামগেল, যাতে পয়েন্ট করে এই সব জায়গা দেখানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: একাধিক এলাকা থেকে বাহিনী ফেরাল ভারত-চিন, ফের বৈঠক বুধবার
মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেকের কাছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-চিন সেনা মোতায়েন শুরু হয়। সেই ঘটনা ঘিরে নয়াদিল্লি-বেজিং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পারদ চড়ে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। ইতিমধ্যেই সামরিক পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। ফের বৈঠক হওয়ার কথা বুধবার। এই ইস্যুতেই রাহুল গাঁধী লাগাতার শাসক দলকে আক্রমণ করে চলেছেন। টুইটারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে প্রশ্ন করেছিলেন। তার পর উর্দু কবি মির্জা গালিবের পংক্তি উদ্ধৃত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কটাক্ষ করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে টুইট করেছিলেন, ‘‘চিনারা লাদাখে আমাদের ভূখণ্ডের অংশ দখল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী নিশ্চুপ এবং অদৃশ্য হয়ে গিয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: ‘যেতে হবে করোনা এক্সপ্রেসেই’, বিপর্যয়ও ভোটের হাতিয়ার অমিতের
কিন্তু রাহুলের সে সব প্রশ্ন, আক্রমণ, কটাক্ষকে কার্যত গুরুত্ব দেয়নি বিজেপি। কিন্তু যে লাদাখ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল, এবং সেই লাদাখেরই সাংসদ যে ভাবে কৌশলী জবাব দিয়েছেন, তাতে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধী শিবির।