প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা।
বিজেপি-বিরোধী দলের যে নেতার বিরুদ্ধে গত কালও সিবিআই উঠেপড়ে লেগেছিল, সেই নেতাই আজ বিজেপিতে যোগ দিতে সিবিআই হাত গুটিয়ে বসে পড়েছে! ভোটের আগে সিবিআই বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে। আবার ভোট মিটলেই সিবিআই শীতঘুমে চলে যায়!
এত দিন বিরোধী দলের নেতারা এই অভিযোগ তুলেছেন। শুক্রবার খোদ প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা সিবিআইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়েই বললেন, সিবিআই তার ‘সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা’-র ফলে নিজের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়ে নিজেই প্রশ্ন তুলে দেয়। আগে সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতার জন্য সিবিআইয়ের হাতে তদন্তের ভার দেওয়ার জন্য আদালতে আর্জির পাহাড় জমত। এখন সময়ের সঙ্গে সিবিআই নিজেই আতশকাচের তলায় চলে এসেছে।
চার দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর বিরুদ্ধে এককাট্টা হতে বিরোধী দলের প্রধানদের চিঠি লিখেছেন। আজ প্রধান বিচারপতি মত দিয়েছেন, সিবিআই, ইডি, এসএফআইও-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে অবিলম্বে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা জরুরি। আইন করে এই সংস্থা তৈরি করতে হবে। তার ক্ষমতা, কাজ, অধিকারও বলা থাকবে আইনে। একটি কমিটি এই সংস্থার অধিকর্তা নিয়োগ করবে। আলাদা আলাদা বিষয় দেখার জন্য অধিকর্তার অধীনে কয়েক জন উপ-অধিকর্তা থাকবেন।
সিবিআই অফিসারেরা যাতে শাসকের ধামাধরা না হয়ে ওঠেন, তার জন্য প্রধান বিচারপতির বার্তা, ‘‘রাজনৈতিক সরকার সময়ের সঙ্গে বদলে যাবে। আপনাদের প্রতিষ্ঠান পাকাপাকি থাকবে। আপস করবেন না, স্বাধীন হোন। নিয়মের বই মেনে চলুন।’’ ক্ষমতার বদলের পরে হেনস্থার শিকার হয়ে অনেকেই আদালতের দ্বারস্থ হন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এক সময় সুপ্রিম কোর্টই সিবিআইকে ‘খাঁচার তোতা’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। এ দিন সিবিআইয়ের আয়োজিত সংস্থার প্রথম অধিকর্তা ডি পি কোহলি স্মারক বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সিবিআইয়ের উপর মানুষের আস্থা ফেরাতে হলে রাজনৈতিক শাসক শিবির ও প্রশাসনের সঙ্গে সিবিআইয়ের আঁতাত ভাঙতে হবে। দুর্নীতির অভিযোগের ফলে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
সিবিআইয়ের অনুষ্ঠানে এসে সিবিআই সম্পর্কে প্রধান বিচারপতির এই কড়া মন্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই সরকার ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মধ্যে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিজেই তাঁর ‘গণতন্ত্র: তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা ও দায়িত্ব’ শীর্ষক বক্তৃতার শুরুতে বলেছেন, ‘‘যখন সিবিআই অধিকর্তা আমাকে আমন্ত্রণ জানাতে এলেন, আমি তখনই ওঁকে বলেছিলাম, আমাকে কিছু সমালোচনামূলক কথা বলতে হবে। আশা করি, উনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজের বিপদ
ডেকে আনেননি।’’
সিবিআইয়ের মতো তদন্তকারী সংস্থাকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে হলে তার শীর্ষকর্তাদেরই প্রধান ভূমিকা নিতে হবে বলেও মত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি রমণা। তাঁর বক্তব্য, কয়েক জন অফিসার চাইলেই হাল শোধরাতে হবে। তবে পরিকাঠামো, কর্ম, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, রাজনৈতিক ক্ষমতার বদলের সঙ্গে অগ্রাধিকার বদলে যাওয়া, অফিসারদের বদলির ফলেও তদন্তকারী অফিসারদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। তার ফলে দোষীরা ছাড়া পেয়ে যান, নির্দোষেরা বিপাকে পড়েন।