ভি কে রবিরাজা। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে জলসঙ্কট এড়িয়েছেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত।
আর মাত্র একটা বছর। তার মধ্যেই দেশের ২১টি শহরে ভূগর্ভস্থ জল প্রায় শেষ হয়ে যাবে। তীব্র জলসঙ্কটে পড়বেন অন্তত ১০ কোটি ভারতীয়। নীতি আয়োগের রিপোর্ট তেমনটাই বলছে। ওই রিপোর্ট যে কতটা সত্যি তার প্রমাণও ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছি আমরা। দেশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় তীব্র জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ-সহ দেশের ২১টি শহর যখন জলের জন্য হাহাকার করছে, সে সময়ই আগামী ৬ মাসের জন্য জলের জোগান করে ফেলেছেন চেন্নাইয়ের বাসিন্দা এই ব্যক্তি।
চেন্নাইয়ের রাজাকিপক্কমের বাসিন্দা ভি কে রবিরাজা। ৪৮ বছরের রবিরাজা পেশায় এক ইনসিওরেন্স কনসালট্যান্ট। কী ভাবে এমন অসাধ্য সাধন করলেন রবিরাজা?
বৃষ্টির জল ধরে রেখে। ২০০৯ সালে ১ হাজার বর্গফুটের বাড়ি বানান তিনি। তার কয়েক বছর পর বাড়ির ছাদটাকেই জলাধার বানিয়ে ফেলেন। ছাদে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করে সেই জল প্রথমে পাইপের মাধ্যমে ৭ হাজার ৫০০ লিটার আয়তনের ট্যাঙ্কে সংগ্রহ করেন। এই ট্যাঙ্কটা অবশ্য দু’ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। যার ৪ হাজার ৫০০ লিটার বৃষ্টির জল ধরে এবং বাকি ৩ হাজার লিটারে কর্পোরেশনের জল। বৃষ্টির জলের সঙ্গে যাতে আবর্জনা না মেশে তাই পাইপের মুখে মোটা সুতির কাপড় লাগিয়ে রেখেছেন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এতে ছাদের নোংরা বেশিভাগটাই কাপড়ে আটকে যায়। আর এই পাইপের জল যেখানে ট্যাঙ্কে গিয়ে পড়ছে, পরিশোধনের জন্য সেখানেও একই ভাবে কাপড় লাগিয়ে রেখেছেন তিনি। জল ট্যাঙ্কে সংগ্রহের পর সেখান থেকেই বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন রবিরাজা।
আরও পড়ুন: ‘বড় ঘোষণা করতে চলেছি’, মোদীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বললেন ট্রাম্প, শুল্ক-যুদ্ধে ইতি?
রবিরাজার পদ্ধতিটা খুবই সহজ। এই পদ্ধতিতে সংগৃহীত জল পানীয় হিসাবে ব্যবহার না করাই ভাল। তবে বাড়ির যে কোনও কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। রবিরাজাও তাই করেছেন। জুন ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ওভারহেড ট্যাঙ্কে দেড় হাজার লিটার জল ধরে রেখেছেন।
শুধু এই একটা উপায়েই নয়, ওভারহেড ট্যাঙ্ক ছাড়াও, ১৩ হাজার লিটারের ভূগর্ভস্থ জলাধারও বানিয়েছেন। তাঁর বাড়ির সীমানার মধ্যে কোনও জলই নষ্ট হতে দেন না তিনি। ছাদ ছাড়া বাকি অংশের জল এই ভূগর্ভস্থ জলাধারে সংগ্রহ করে রাখেন। সংগৃহীত জল থেকে তাঁর রোজকার প্রয়োজনে ৮ থেকে ১০ লিটার জল খরচ হয়। এখনও পর্যন্ত তা জল রয়েছে তাতে আগামী ৬ মাস তিনি কাজ চালাতে পারবেন, জানান রবিরাজা।
আরও পড়ুন: ছেলের ব্যাট, বাবার জুতো! কৈলাস বিজয়বর্গীয় পিটিয়েছিলেন আধিকারিককে?
খরা পরিস্থিতি কাটানোর জন্য রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ যে অন্যতম উপায় তা বার বারই বলে আসছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। চেন্নাইয়ে জয়ললিতার আমলে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করার জন্য জলাধারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। তবে এখনও সে ভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জল ধরো জল ভরো’ নামে সরকারি কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল, যে কোনও উপায়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও তার ব্যবহার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য অনুযায়ী এই প্রকল্পে প্রায় ১ লক্ষ ২ হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। এর জন্য প্রতিটি ব্লকে নির্ধারিত টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছিল। তবে এই প্রকল্প কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
বর্তমানে দেশে জল নিয়ে সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে চেন্নাই। ইতিমধ্যেই তিনটি নদী, চারটি জলাশয়, পাঁচটি জলাভূমি প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে চেন্নাইয়ে। রবিরাজার মতো চেন্নাইয়ের বেশিরভাগ মানুষ, বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট যদি বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে, তাহলে এই ঘাটতি অনেকটাই এড়ানো যাবে, দাবি পরিবেশকর্মীদের।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।