এ ভাবেই বেঙ্গালুরু জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত রাসায়নিক ফোম। ছবি: ইউটিউব।
প্রাথমিক ভাবে সকলে মনে করেছিলেন, জিনিসটা সাবানের ফেনা। আর সে কারণেই পথচলতি জনতা থেকে প্রশাসন— কেউই বিষয়টায় গুরুত্ব দেয়নি প্রথমে। তবে, ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। সাদা ফেনা যাদের গায়ে লাগে, সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় চুলকানি। আর তাতেই সম্বিৎ ফেরে সকলের। পরে জানা যায়, সাবানের ফেনা বলে যাকে মনে করা হয়েছিল তা আসলে অতি বিষাক্ত!
বিপত্তির শুরু শনিবার সকাল থেকে। এমনিতেই গত কয়েক দিন ধরেই অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে। তবে, ওই দিন সকালে হঠাত্ই শহরের ভার্থুর লেকের জল সাদা ফেনায় ভরে যেতে শুরু করে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে থাকে ফেনার পরিমান। লেক ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে আশপাশের এলাকায়। বৃষ্টির তীব্রতার পাশাপাশি বাড়তে থাকে সাদা ওই ফেনাও।গত বছর এই ভার্থুর লেকেই ভয়াবহ আগুন লেগেছিল।
প্রথম দিকে বেঙ্গালুরু পুরসভা বিষয়টিকে তেমন একটা আমল দিতে চায়নি। কিন্তু, রবিবার পরিস্থিতি আরও জটিল হতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ জানাতে শুরু করেন, ওই ফেনা গায়ে লাগলেই শরীরের সেই অংশটি চুলকাচ্ছে। জ্বালা করছে। এবং লালও হয়ে যাচ্ছে। এর পরেই খবর দেওয়া হয় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের।
দেখুন ভিডিও সৌজন্যে টুইটার'
দেখুন ভিডিও সৌজন্যে টুইটার
ফেনার নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে। প্রাথমিক ভাবে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, ওই সাদা রঙের ফেনা অত্যন্ত বিষাক্ত। এবং তা রাসায়নিক ভাবেই তৈরি হয়েছে। ফেনা যাতে কোনও ভাবেই গায়ে না লাগে, সে জন্য সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছেন তাঁরা। তবে ওই রাসায়নিক ফেনা আসলে কী, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। বেশ কয়েকটি পরীক্ষার পরেই এ বিষয়ে নিশ্চিত করে জানানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা জানিয়েছেন, লেকের জল দূষিত হয়ে যাওয়ার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ১৮০ হেক্টর বিস্তৃত ভার্থুর লেক বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে বড় লেকগুলির অন্যতম একটি। কিন্তু আশপাশের বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য, বিষাক্ত রাসয়নিক এবং আবর্জনা এসে জমা হয় ওই জলাশয়ে। ফলে জলাশয়টির জল অত্যন্ত দূষিত।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুর হ্রদে ভয়াবহ আগুন, রাস্তা-আকাশ ঢাকল ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে
এলাকার এক বাসিন্দা প্রবীর বি জানিয়েছেন, ফেনা গায়ে লাগলেই সেই জায়গাটা চুলকাতে শুরু করছে। কিছুটা পরেই জায়গাটা লাল হয়ে যাচ্ছে। আর জ্বালাও করছে। পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে পুরসভা। কিন্তু স্বাভাবিক তো দূরের কথা, গত তিন দিনে ফেনার পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফেনার হাত থেকে গা বাঁচিয়ে চলা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বিষাক্ত ফেনা শহরের বড় রাস্তাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে যান চলাচলেও। সপ্তাহের প্রথম দিন সোমবার খুবই কম যান চলাচল করছে শহরে। পরিবেশবিদদের অভিযোগ, দূষণের মাত্রা গোটা বেঙ্গালুরু শহরে ভয়াবহ আকার নিয়েছে। শহরের অধিকাংশ লেকের জলই নোংরা এবং দূষিত। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভা এবং প্রশাসনের উদাসীনতার জন্যেই পরিস্থিতি এমন জটিল আকার নিচ্ছে। এর আগে এই ভার্থুর লেকেই এক বার আগুন ধরে গিয়েছিল। সে বারও কারণ হিসেবে মাত্রারিক্ত পরিবেশ দূষণকেই দায়ী করা হয়েছিল।