কে শিবন ও নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
ইসরোকে এ বার রাজনৈতিক বক্তৃতায় হাতিয়ার করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার হরিয়ানার রোহতকে বিজেপির ‘বিজয় সঙ্কল্প’ কর্মসূচির উদ্বোধনে গিয়ে মোদী বললেন, গোটা দেশের মধ্যে ‘ইসরো মানসিকতা’ কাজ করছে ও দেশবাসীর মানসিকতা এখন সাফল্য ও ব্যর্থতার সীমারেখায় আবদ্ধ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘দেশবাসী আর হতাশাব্যঞ্জক কথা শুনতে রাজি নয়।’’
অর্থনৈতিক মন্দা, সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে সরব বিরোধীরা। ইসরোর চন্দ্রাভিযানকে টেনে এনে সেই আক্রমণের মোকাবিলা মোদী করতে চাইছেন বলে মত অনেকের। শনিবার সকালেও ইসরোর বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের সামনে মোদী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। যে বক্তৃতা তাঁদের মানসিক জোর জুগিয়েছে বলে দাবি ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবনের।
বিক্রমের অবতরণ ব্যর্থ হওয়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই আলোচনার কেন্দ্রে এখন বিক্রম বা ইসরো নয়, চলে এসেছেন ইসরোর চেয়ারম্যান কাইলাশাবাদিবু শিবন। শনিবার মোদীর সামনে শিবনের কান্না এবং তাঁকে জড়িয়ে মোদীর সান্ত্বনা দেওয়ার দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। তাঁর কান্নার ‘যৌক্তিকতা’ নিয়ে আড়াআড়ি ভাগ হয়েছে সমাজ-মাধ্যম। শিবনের নামে একাধিক ভুয়ো প্রোফাইলও তৈরি হয়েছে টুইটারে। সেখান থেকেও নানান কথাও ছড়ানো হচ্ছে।
ইসরোর চেয়ারম্যান, ৬২ বছরের শিবন প্রথম সারির রকেট বিজ্ঞানী। জন্ম কন্যাকুমারীর নাগেরকয়েলের কাছে এক অখ্যাত গ্রামে। দরিদ্র কৃষকের সন্তান শিবনের পড়াশোনা গ্রামের তামিল মাধ্যম স্কুলে। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে আমবাগানে কাজ করেছেন। পরে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর। আইআইটি বম্বের ডক্টরেট। ২০১৮ সালে ইসরোর চেয়ারম্যান হওয়ার আগে তিরুঅনন্তপুরমে বিক্রম সারাভাই মহাকাশ কেন্দ্রের ডিরেক্টর ছিলেন।
ইসরো সূত্রের খবর, শিবন বিজ্ঞানী হলেও ঈশ্বরবিশ্বাসী। চন্দ্রযান উৎক্ষেপণের আগে তিরুপতি মন্দিরে গিয়েছিলেন। উৎক্ষেপণের আগে পুজো দেওয়ার রীতি আছে ইসরোয়।
কিন্তু শিবনের ক্ষেত্রে বিতর্ক বেধেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর কান্না দেখে সেই কটাক্ষ জোরালো হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, দেশবাসীর সহমর্মিতা আদায়ের জন্যই কান্না, ব্যর্থতার দায় যাতে তাঁর কাঁধে না-বর্তায়। অনেকে অবশ্য পাল্টা বলেছেন, নিজের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই চোখে জল এসেছিল শিবনের।
কান্নার কারণ যা-ই হোক না কেন, সোশ্যাল মিডিয়া এখন মহাকাশ অভিযান নিয়ে সরগরম। প্রত্যেকেই নিজের মতো যুক্তি সাজিয়ে ইসরোর সমালোচনা বা প্রশংসা করছেন। নানা ভুয়ো তথ্যও উঠে আসছে। অনেকেই বলছেন, শিবনের পক্ষে এবং বিপক্ষে থাকা বেশির ভাগ নাগরিকই কার্যত অন্ধের মতো আচরণ করছেন। যুক্তিসঙ্গত আলোচনা হচ্ছে না।
তবে এর মাঝে পুরনো একটি ব্যর্থতার কথাও উঠে এসেছে। ১৯৭৯ সালের ১০ অগস্ট রোহিণী নামে কৃত্রিম উপগ্রহ ভেঙে পড়ে। উৎক্ষেপণের দায়িত্বে থাকা এ পি জে আব্দুল কালামকে সরিয়ে দেননি তৎকালীন ইসরো প্রধান সতীশ ধবন। সাংবাদিক বৈঠকে পাশে বসিয়ে পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন। শিবনকে মোদীর বুকে টেনে সান্ত্বনা দেওয়া নিয়ে সেই তথ্য সামনে এনেও শুরু হয়েছে প্রচার। পরের বছরই রোহিণীর সফল উৎক্ষেপণ করেছিলেন কালাম। শিবন কি পারবেন ১৯৮০ সালের কালামের কৃতিত্বের পুনরাবৃত্তি করতে?