অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন। তাঁর সরকার গত বাজেটে বলেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে রাশ টানা এবং তার চরিত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তৈরির কথা। কিন্তু মোদী সরকারেরই শরিক তেলুগু দেশমের প্রধান তথা অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু ঘোষণা করেছেন, তিনি সন্তান উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আইন তৈরির চিন্তা করছেন। কারণ রাজ্যের জনসংখ্যায় বয়স্কদের হার বাড়ছে।
একই সুরে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন গণবিবাহের অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন, আপনারা কেন ১৬টি সন্তানের লক্ষ্য নিচ্ছেন না? তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমতে থাকলে লোকসভায় তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিত্ব কমবে। কেন্দ্রীয় কর বণ্টনে রাজ্যের ভাগও কমবে।
দক্ষিণের দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই নতুন অবস্থানে মোদী সরকার দু’বছর পরে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস হলে যে উত্তর বনাম দক্ষিণ ভারতের বিবাদের আশঙ্কা করছিল, এখনই সেই বিতর্কের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ, ২০২১-এর জনগণনা এখনও হয়নি। তা হলে ২০২৬-এর পরে সেই জনগণনা অনুযায়ী, লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস হওয়ার কথা। সরকারি অনুমান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলির তুলনায় দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অনেক ভাল কাজ করেছে। এখন নতুন জনসংখ্যা অনুযায়ী, লোকসভার আসন ৫৪৩ থেকে বাড়িয়ে ৮৪৮ করা হতে পারে। সেখানে হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলির সাংসদ সংখ্যা অনেক বেশি বাড়বে। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির সাংসদ সংখ্যা বাড়বে সামান্য। আর যদি লোকসভার আসন সংখ্যা ৫৪৩-এই বেঁধে রাখা হয়, তা হলে দক্ষিণের রাজ্যগুলির সাংসদ সংখ্যা কমে যাবে। কেরলের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী থমাস আইজ্যাকের বক্তব্য, ‘‘দক্ষিণ ভারতের দুই মুখ্যমন্ত্রীর জনসংখ্যা নীতির বদলের কথা থেকে সংসদে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ স্পষ্ট। দ্রুত এই ক্ষোভ নিরসনের সমাধানসূত্র বার করা দরকার।’’
শুধু সংসদে প্রতিনিধিত্ব কমে যাওয়া নয়। দক্ষিণের দলগুলির বক্তব্য, অর্থ কমিশন কেন্দ্রীয় করের ভাগ-বাঁটোয়ারা ঠিক করবে রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে। সেখানেও দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য খাতে বেশি খরচ করেও বঞ্চিত হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখতে সন্তান উৎপাদনের হার মহিলা পিছু ২.১ হওয়া দরকার। জাতীয় হার এখন মাত্র দুই। দক্ষিণের রাজ্যগুলির সন্তান উৎপাদনের হার জাতীয় গড়ের থেকে কম। সেই কারণে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বয়স্ক মানুষের হার উত্তরের তুলনায় বেশি। সেই কারণে অন্ধ্র, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীরা এখন বেশি সন্তান উৎপাদনের কথা বলছেন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব শৈলজা চন্দ্রের অবশ্য যুক্তি, ‘‘সন্তান উৎপাদনের হার এ ভাবে বদলানো যাবে না। গত কয়েক দশক ধরে দক্ষিণের রাজ্যগুলি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। এখন আচমকা বেশি সন্তান উৎপাদনে উৎসাহ দিয়ে লাভ হবে না। দক্ষিণের রাজ্যগুলিকে উত্তর ভারত থেকে পরিযায়ী কর্মী আসায় উৎসাহ দিতে হবে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক ঝুঁকি কেউ নেবে না।’’