কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক।
প্রতিটি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা— সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরেই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি হয়েছে বলে ফের দাবি করলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক। যে কারণে আর ‘সময় নষ্ট না-করে’ দ্রুত সেই নীতি কার্যকর করতে দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ডাক দিলেন তিনি। যদিও পশ্চিমবঙ্গের অভিযোগ, নীতি তৈরিতে রাজ্যের মত নেওয়া হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের তরফ
থেকে পাঠানো লিখিত বক্তব্য অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এমনকি বাংলা থেকে কোনও শিক্ষাবিদকেও রাখা হয়নি নীতি তৈরির কমিটিতে।
সোমবার উপাচার্যদের উদ্দেশে ভিডিয়ো-বার্তায় নিশঙ্ক দাবি করেন, আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, শিক্ষক থেকে শুরু করে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সকলের সঙ্গে কথা বলে তবেই তৈরি করা হয়েছে নতুন শিক্ষানীতি। তাঁর কথায়, “প্রত্যেক রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। রাজ্য ধরে-ধরে আলোচনায় বসা হয়েছে প্রায় প্রত্যেক সাংসদের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী থেকে গ্রাম-প্রধান, মন দিয়ে শোনা হয়েছে প্রত্যেকের মত।” অর্থাৎ নিশঙ্কের বক্তব্য, এই সমস্ত কিছুর পরেও বিরোধীরা আলোচনা না-করে নতুন নীতি আনার যে অভিযোগ তুলছেন, তা ভিত্তিহীন। এ প্রসঙ্গে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতেই তাঁর সংযোজন, “কোন উপাচার্য, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাবিদ তখন কী পরামর্শ দিয়েছিলেন, তার প্রত্যেকটি বলে দিতে পারি। আমার কাছে সমস্ত রাখা রয়েছে।”
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “শিক্ষানীতি নিয়ে পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আপত্তির ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করার পরে, সেই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে।” তিনি জানান, নতুন শিক্ষানীতির বিষয়ে শিক্ষক সংগঠন, গণ সংগঠন, শিক্ষাবিদদের কোনও বক্তব্য থাকলে, তা-ও ই-মেল করে শিক্ষা দফতরে পাঠাতে বলা হচ্ছে। শিক্ষা যৌথ তালিকার অন্তর্ভুক্ত বিষয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সকলের মতামত নিয়ে শিক্ষানীতি তৈরির কথা বললেও, রাজ্যের মত নেওয়া হয়নি। রাজ্যের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য জানানো হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা গ্রাহ্য হয়নি। এমনকি বাংলা থেকে কোনও শিক্ষাবিদকেও রাখা হয়নি নীতি তৈরির কমিটিতে।
পর্যাপ্ত আলোচনা ছাড়াই নীতি তৈরির অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস, সিপিএমের মতো বিরোধী দলগুলিও। প্রশ্ন উঠেছে, সংসদ এড়িয়ে কেন এই নীতি আনা হল? কেনই বা সংসদে আলোচনার আগে তা চালু করার এত তাড়া? কিন্তু এ দিন উপাচার্যদের উদ্দেশে নিশঙ্কের আহ্বান, “প্রধানমন্ত্রী সময় বেঁধে মিশন মোডে এই নীতি কার্যকর করতে বলেছেন। তার জন্য এগিয়ে আসুন। এ জন্য পরিচালন-ব্যবস্থা, পাঠ্যক্রম, আর্থিক বিষয় ইত্যাদিতে যা-যা পরিবর্তন প্রয়োজন, তা দ্রুত সেরে ফেলার চেষ্টা করুন।” দেশের স্বার্থেই এই নীতি প্রণয়নের কাজ ফেলে রাখার আর সময় নেই বলে তাঁর দাবি।