ফাইল চিত্র।
হাসপাতাল থেকে ছুটির পরেও উদ্বেগ যে রয়েছে, তা স্বীকার করে পোস্ট-কোভিড ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল জারি করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু উদ্বেগ নিরসনে কেন্দ্রের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তৈরি হল বিতর্ক। রবিবার পশ্চিমবঙ্গে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দু’লক্ষ পেরিয়েছে (২,০২,৭০৮)। মোট মৃতের সংখ্যা প্রায় চার হাজার (৩৯৪৫)। সুস্থতার হার ৮৬.৪০ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা-বর্ধক হিসেবে যে ভাবে কেন্দ্রীয় প্রোটোকলে আয়ুষ-মেডিসিনকে স্বাগত জানিয়ে রোজ সকালে চ্যবনপ্রাশ, হলুদ-মিশ্রিত গরম দুধ, অশ্বগন্ধা খাওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাতে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে মডার্ন মেডিসিনের চিকিৎসকদের।
করোনা আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। প্রোটোকলে বলা হয়েছে, সুস্থ হওয়ার পরেও ক্লান্তিভাব, গায়ে ব্যথা, কাশি, গলা খুশখুশ, শ্বাসকষ্ট-সহ নানাবিধ উপসর্গ থাকছে। যার প্রেক্ষিতে এই রোগীদের জন্য একটি সার্বিক রূপরেখা তৈরি করা প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যেই এই প্রোটোকল তৈরি হয়েছে জানিয়ে মাস্কের ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি, শারীরিক দূরত্ব, পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্য খাওয়া, যোগাভ্যাস, ধূমপান এবং মদ্যপান বর্জনের পাশাপাশি আয়ুষ মেডিসিন ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। তবে কোন পরামর্শ কোভিড-জয়ীরা মানবেন, তা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের উপরেই ছাড়া হয়েছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আয়ুষ বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্র এই প্রোটোকলে আয়ুষকে স্বীকৃতি দিলেও লাভ নেই। কারণ, রাজ্যের স্বীকৃতি মিলবে কি না, সন্দেহ রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের আয়ুষ বিভাগের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘আয়ুর্বেদ এবং হোমিওপ্যাথির সুফল কতখানি, তা দেখতে সমীক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্য ভবনের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কেন্দ্র অনুমতি দিলেও স্বাস্থ্য ভবনের অনুমতি মেলেনি।’’ আয়ুষ বিভাগের আরেক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘দফতরের অনেক পদস্থ কর্তাই গোপনে আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০, আয়ুর্বেদ পথ্য ব্যবহার করছেন। কিন্তু কেউ স্বীকার করবেন না। স্বাস্থ্য ভবনের আয়ুষ ওয়েলনেস সেন্টারে খোঁজ নিলেই সব জানা যাবে!’’
বঙ্গে আক্রান্ত
২,০২,৭০৮
অ্যাক্টিভ রোগী
২৩,৬২৪
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত
৩২১৫
২৪ ঘণ্টায় মৃত
৫৮
মোট মৃত
৩৯৪৫
কো-মর্বিডিটির কারণে মৃত
৩৩৮৬
(সূত্র: রাজ্য সরকার)
আরও পড়ুন: উমর খালিদ গ্রেফতার, দিল্লি হিংসা মামলায়, দেওয়া হল ইউএপিএ
আরও পড়ুন: ‘রুটিন পরীক্ষার জন্যই ভর্তি অমিত’
‘স্টেট মেডিসিনাল প্ল্যান্ট বোর্ডে’র অধিকর্তা প্রশান্ত সরকার জানান, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এ রাজ্যে আয়ুর্বেদের নিদান ইতিমধ্যে নেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিটি জেলায় ক্বাথ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সরকারি ঘোষণা নেই। করোনা নিয়ন্ত্রণে এ রাজ্যেই একমাত্র আয়ুর্বেদ বা হোমিওপ্যাথির ব্যবহার নিয়ে কোনও নির্দেশিকা নেই।’’
মডার্ন মেডিসিনের চিকিৎসকদের বক্তব্য, নামে ‘প্রোটোকল’ হলেও এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মনোভাবই পরামর্শের আকারে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রবীণ চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘কোভিডের পরে যে ধরনের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে সেগুলি অত্যন্ত জটিল এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে আরও যে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রোটোকলেও বলা হয়েছে। ফলে চিকিৎসা পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে যখন পর্যাপ্ত তথ্য হাতে নেই তখন প্রোটোকলের পরিভাষা আরেকটু দায়িত্বশীল হলে ভালো হত। কোভিডের ক্ষেত্রে রোগীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের উপরে সব ছাড়ার সময় এখনও আসেনি বলেই মনে হয়।’’ কার্ডিয়াক সার্জন কুণাল সরকারের টুইট, ‘‘এটা ‘প্রোটোকল’ হলে সব চেয়ে খারাপটা এখনও বাকি।’’ ভয়ের ইমোজি-সহ একটি ‘মিম’ পোস্ট করেন কুণালবাবু। তাতে লেখা, ‘‘একটি প্রোটোকল, যাতে কোভিডের পরে স্নায়বিক, শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত ও হৃদ্রোগের সমস্যার কোনও উল্লেখ নেই। মনে হচ্ছে যেন পৌরাণিক কাহিনি!’’
রাজ্যের করোনা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য তথা এসএসকেএমের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সৌমিত্র ঘোষ জানান, কোনও চিকিৎসা পদ্ধতিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রাতারাতি বৃদ্ধি বা সহজে পরিবর্তন করা যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু ভাল ভাবে মাস্ক ব্যবহার করলেই দেখবেন সংক্রমণ কমে গিয়েছে। কোভিডে মাস্কই হচ্ছে নতুন ভ্যাকসিন। বিজ্ঞান নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন তাঁদের কাছে মধু, তুলসীপাতা, হলুদ মিশ্রিত দুধ, চ্যবনপ্রাশের ব্যবহারে কতখানি সুফল মিলবে তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে।’’