রাফাল চুক্তি নিয়ে বিতর্ক গত বছর থেকে।—নিজস্ব চিত্র।
রাফাল চুক্তি নিয়ে দেশ জুড়ে রাজনৈতিক তরজা চলছে। তারমধ্যেই শীর্ষ আদালতে গোপন নথি জমা দিল মোদী সরকার। মুখবন্দি ওই খামে ফরাসি সংস্থা দাসোর থেকে ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত ও চুক্তি সংক্রান্ত বিশদ তথ্য রয়েছে। প্রতিটি যুদ্ধবিমান কিনতে কত খরচ হয়েছে তা-ও রয়েছে ওই নথিতে। বুধবার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি।
বিতর্কিত রাফাল চুক্তির সবিস্তার তথ্য জানতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক আবেদন জমা পড়েছিল। দাবি উঠেছিল, আদালতের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তেরও। এর পরেইগত ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রের কাছে রাফালের দাম সংক্রান্ত তথ্য জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। ১০ দিনের মধ্যে বিশদ তথ্য জমা দিতে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সেই সময়সীমা পেরিয়েও গিয়েছে ইতিমধ্যে।
সরকারি একটি সূত্রের দাবি,সোমবার বন্ধ খামে রাফাল চুক্তি সংক্রান্ত যে ১৬ পাতার নথি জমা দিয়েছেকেন্দ্র, তাতে বলা হয়েছে, ওই চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি চলে একবছর ধরে। সে জন্য একটি বিশেষ দলও গঠন করা হয়েছিল। দর কষাকষির পর ৪ অগস্ট, ২০১৬ একটি রিপোর্ট জমা দেয় ওই কমিটি। অর্থ এবং আইন মন্ত্রক ২০ দিনের মধ্যে সেই রিপোর্ট পর্যালোচনা করেও দেখে।
আরও পড়ুন: মধ্য দিল্লির বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিকাণ্ড
তার পর সেই রিপোর্ট যায় মন্ত্রিপরিষদের নিরাপত্তা কমিটি এবং প্রতিরক্ষা দফতরের অস্ত্র কেনার দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলের হাতে। ২৪ অগস্ট তাদের তরফে ওই চুক্তিতে সায় মেলে। কোন ভারতীয় সংস্থাকে বরাত দেওয়া যায়, তা নিয়েও সরকারের তরফে কোনও মতামত দেওয়া হয়নি।
রাফাল বিমান কেনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে। ২০১৩ সালে বিমান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের স্থির করা নিয়ম মেনেই এগনো হয়েছে,সরকারএমনটাই দাবি করেছে বলে সূত্রের খবর।
চুক্তির বিশদ তথ্য সামনে এলে বিমান ও তার সরঞ্জামের খুঁটিনাটি প্রকাশ হয়ে যাবে, তাতে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে এর আগে রাফাল নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। তবে সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি ছিল, দেশের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে কেন্দ্র যদি কিছু প্রকাশ করতে না চায়, তাহলে সেইমতো হলফনামা জমা দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: তাড়া করেছে বাঘ, জঙ্গলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে হুডখোলা গাড়ি, তার পর...
রাফাল চুক্তি নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত গত বছরের শেষে। ইউপিএ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে তিনগুণ বেশি দামে বিমান কেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে কংগ্রেস। কোনও বিমান নির্মাণ সংস্থার বদলে, অনিল অম্বানীর ‘অনভিজ্ঞ’ ভারতীয় সংস্থা রিলায়্যান্সকে ফ্রান্সের তরফে বরাত দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যার যথোপযুক্ত জবাব দিতে পারেনি মোদী সরকার।
শুধুমাত্র বিরোধী দলগুলিই নয়, রাফাল চুক্তিতে তদন্ত চেয়ে সম্প্রতি ব্যক্তিগত স্তরেওঅনেকে সরব হয়েছেন। এ নিয়ে প্রথম আবেদনটি জমা দেন আইনজীবী মনোহরলাল শর্মা এবং বিনীত ধান্দা। আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংহও আদালতে আবেদন জমা দেন। পরে যৌথ আবেদনদাখিল করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী যশবন্ত সিংহ, অরুণ শৌরী এবং সমাজকর্মী-আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।