গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বা অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে দায়ের করা সবক’টি মামলার শুনানি শুরু হল সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে বুধবার এই মামলাগুলির শুনানি শুরু হয়েছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সোম এবং শুক্রবার বাদে প্রতি দিনই ধারাবাহিক ভাবে চলবে এই মামলার শুনানি।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের পাশাপাশি সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জয় কিসান কউল, বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি সূর্য কান্ত। ৩৭০ ধারা বাতিলের কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আবেদনকারী পক্ষের হয়ে বুধবার শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। শুনানির সূচনায় তিনি বলেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত আদৌ সাংবিধানিক কোনও পদক্ষেপ নয়। পুরোপুরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’’
২০১৯ সালের ৫ অগস্ট রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দানকারী ৩৭০ নম্বর ধারা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জানিয়েছিলেন, এ সংক্রান্ত নির্দেশনামায় সই করেছেন রাষ্ট্রপতি। এর পরে সংসদের দুই কক্ষে ৩৭০ বাতিলের বিল পাশের ফলে বিশেষ মর্যাদা হারায় কাশ্মীর। এমনকি, হারায় রাজ্যের মর্যাদাও। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ— দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়।
সেই সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ দাবি করে শীর্ষ আদালতে মোট ২০টি আবেদন জমা পড়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে আবেদনগুলিতে। গত ১১ জুলাই প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, সবগুলি আবেদনের একত্রে শুনানি হবে সাংবিধানিক বেঞ্চে। এই মামলার অন্যতম আবেদনকারী, প্রাক্তন আইএএস আধিকারিক শাহ ফয়জলের মতে, ওই পদক্ষেপ করার সময় সাংবিধানিক দিকটিতে নজর দেয়নি মোদী সরকার।
যদিও সরকার পক্ষের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হলেও সেই মর্যাদা স্থায়ী ছিল না, বরং ছিল ‘অস্থায়ী সংস্থান’ (টেম্পোরারি প্রভিশন)। ওই অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ইচ্ছে করলে ওই ‘বিশেষ মর্যাদা’ তুলে নিতে পারেন। রাষ্ট্রপতির ওই ক্ষমতাকে ব্যবহার করেই ২০১৯ সালে ‘বিশেষ মর্যাদা’ প্রত্যাহার করে মোদী সরকার। অর্থাৎ নির্দেশনামায় রাষ্ট্রপতি সই করার পরের মুহূর্ত থেকেই রদ হয়ে যায় ৩৭০ ধারা। এই ধারার অধীনেই ৩৫এ ধারায় ভারতীয় ভূখণ্ডে থেকেও জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা যে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন, খারিজ হয়ে যায় সেটাও।