প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
ইউপিএ সরকারের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের নাম বদলে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাতে জুড়ে গেল প্রধানমন্ত্রীর নাম-মহিমা। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের নাম বদলিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’ রাখা হবে।
কোভিডের সময় মোদী সরকার খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় থাকা ৮১ কোটি মানুষকে নিখরচায় বাড়তি রেশন বিলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তার নাম ছিল ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা।’ দু’সপ্তাহ আগে মোদী সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, চলতি বছরেও খাদ্য সুরক্ষা আইনে ৮১ কোটি মানুষকে পুরোপুরি নিখরচায় রেশন দেওয়া হবে। এত দিন যে চালের জন্য প্রতি কেজি ৩ টাকা, গমে প্রতি কেজি ২ টাকা নেওয়া হত, সেটাও আর নেওয়া হবে না। কিন্তু এর উল্টো দিকে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা-য় ইতি টেনে বাড়তি রেশন বিলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই আবহে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে আমজনতার ভোটকে পাখির চোখ করে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিল, এখন থেকে গোটা খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের নামই ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’ রাখা হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাকে পাঠানো নোটে খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের প্রস্তাব ছিল, নতুন নাম হোক ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব অন্ন সুরক্ষা যোজনা’। তার বদলে কোভিডের সময় থেকে চালু ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’-র নামই পছন্দ করেছেন মোদী।
কংগ্রেসের অভিযোগ, ইউপিএ সরকার খাদ্য সুরক্ষা আইন করে গরিবদের জন্য সস্তায় রেশনের প্রকল্প নিয়েছিল। সে সময়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই তার বিরোধিতা করেছিলেন। এখন তিনিই ২০২৪-এর ভোটের আগে সেই প্রকল্পে নিজের নাম জুড়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন। এর আগেও মোদী পুরনো সরকারি প্রকল্প, বিশেষত ইউপিএ সরকারের প্রকল্প নতুন মোড়কে হাজির করে তাতে প্রধানমন্ত্রীর নাম জুড়ে দিয়েছেন। যেমন, ইন্দিরা আবাস যোজনার নাম বদলিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা করা হয়েছে। ফসল বিমা প্রকল্পের নাম মোদী জমানায় প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা হয়েছে। জন ঔষধির নামও প্রধানমন্ত্রীর নামে হয়েছে। দরিদ্র পরিবারকে নিখরচায় রান্নার গ্যাসের সংযোগ প্রকল্পের নাম প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা, ইন্দিরা গান্ধী মাতৃত্ব সহযোগ যোজনার নাম প্রধানমন্ত্রী মাতৃত্ব বন্দনা যোজনা করা হয়েছে। কিছু দিন আগে সারে ভর্তুকির প্রকল্পের নামও প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনউর্বরক পরিযোজনা রাখা হয়েছে। এ বার খাদ্য ভর্তুকিতেও প্রধানমন্ত্রীর নাম জুড়ে দেওয়া হল।
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, নিখরচায় রেশন বিলির পুরো খরচই মোদী সরকার বহন করবে। ফলে পুরো কৃতিত্বও মোদী সরকার, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাওয়া উচিত। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রকল্পের নামকরণ। মোদী সরকারের যুক্তি, বিনামূল্যে রেশন বিলি করতে সরকার বছরে ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। সরকারি সূত্রই বলছে, এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের মাত্র ১৮,৫০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে। সেটা খাদ্য ভর্তুকিতে বর্তমান খরচের ১০ শতাংশেরও কম।