—ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টে এক রকম পরিসংখ্যান এবং প্রতিশ্রুতি। রাজ্যগুলির কাছে আর এক রকম। আবার আর এক রকম তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বয়ানে! কেন্দ্রের তরফে কোভিডের টিকার কতখানি জোগান কবে মিলবে, তা নিয়ে তথ্যের ‘ফারাক’ নরেন্দ্র মোদী সরকারেরই অন্দরে।
কোভিড মোকাবিলা নিয়ে প্রশ্নের মুখে মোদী সরকার শীর্ষ আদালতে হলফনামায় জানিয়েছিল, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে ৫১.৬ কোটি টিকার ডোজ় জোগানো হবে। সোমবার সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রক বিবৃতিতে এখনও পর্যন্ত ৩৯.৪৯ কোটি ডোজ় জোগানোর হিসাব দিয়েছে। অর্থাৎ, সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ মাসের বাকি ১৯ দিনে কেন্দ্রকে আরও ১২ কোটি ডোজ়ের বন্দোবস্ত করতে হবে। অথচ গত মাসেই স্বাস্থ্য মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে চিঠিতে জানিয়েছে, জুলাইয়ে সব মিলিয়ে ১২ কোটি ডোজ় জোগানো সম্ভব হবে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র কী ভাবে জুলাইয়ের মধ্যে ৫১.৬ কোটি ডোজ় জোগানোর হিসাব মেলাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই হিসেব মেলাতে না-পারলে, চলতি বছরের মধ্যে ১৮ বছরের বেশি বয়সি সকলকে টিকাকরণের লক্ষ্য পূরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। কারণ, কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল, জুলাই পর্যন্ত ৫১.৬ কোটি এবং অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ১৩৫ কোটি ডোজ় সরবরাহ করা হবে। এখন যদি জুলাইয়েরই লক্ষ্য পূরণ না-হয়, তখন প্রশ্নের মুখে পড়বে বাকি কয়েক মাসে ১৩৫ কোটির বেশি টিকার সংস্থানও।
বিরোধীদের অভিযোগ, টিকাকরণনিয়ে মোদী সরকার এক-এক জায়গায় এক-এক রকম তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। বাস্তব হল, টিকার অভাবে বহু রাজ্যে অনেক টিকাকরণ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যেমন সকলকে নিখরচায় টিকা জোগাচ্ছেন বলে জোরদার প্রচারে নেমেছেন, তেমনই দ্রুত গতিতে রাজ্যগুলিকে যথেষ্ট পরিমাণে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে টিকার জোগান নিশ্চিত করুন।
টিকা-কাহিনি
• দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সির সংখ্যা ৯৪.৪ কোটি।
• ডিসেম্বরের মধ্যে এদের সকলকে টিকা দিতে লাগবে ১৮৬-১৮৮ কোটি ডোজ়।
• জুলাইয়ের মধ্যে কেন্দ্রের টিকা জোগানোর কথা ৫১.৬ কোটি ডোজ়।
• কিন্তু সোমবার সকাল পর্যন্ত টিকার মোট জোগান ৩৯.৪৯ কোটি।
• অর্থাৎ, বাকি জুলাইয়ের মধ্যে জোগাতে হবে আরও ১২ কোটি।
• অথচ পুরো জুলাই জুড়ে রাজ্যগুলিকে ১২ কোটি ডোজ় দেবে বলেছে কেন্দ্র।
• প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে লক্ষ্যপূরণ হবে কী ভাবে? কী করেই বা মিলবে সুপ্রিম কোর্ট ও রাজ্যগুলিকে দেওয়া হিসেব?
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, জুলাইয়ের বাকি ১৯ দিনে ১২ কোটি ডোজ় জোগানো শক্ত। ফলে জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে যে ৫১.৬ কোটি টিকার কথা সুপ্রিম কোর্টে বলা হয়েছে, সেই লক্ষ্য ছোঁয়া কঠিন।
বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রথমে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিল, অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ২১৬ কোটি ডোজ় মিলবে। সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তা ৮১ কোটি কমিয়ে ১৩৫ কোটি বলেছে।
দৈনিক টিকাকরণের হার নিয়েও প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র। ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্ককে টিকা দিতে দিনে প্রায় ১ কোটি টিকাকরণ দরকার। কিন্তু হচ্ছে গড়ে ৩০-৪০ লক্ষ। নীতি আয়োগের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানাগাড়িয়া বলেন, ‘‘ভারতে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টিকাকরণের হার যথেষ্ট নয়। রোজ অন্তত ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টিকাকরণ দরকার। টিকার অভাব বা টিকা নিতে দ্বিধা, কী কারণে টিকাকরণ এত কম, তা স্পষ্ট নয়।’’
বিরোধীদের দাবি, টিকা থাকলেই লোকে টিকা নেবেন। ২১ জুন ৯১.৭৪ লক্ষ ডোজ় টিকাকরণের রেকর্ড হয়েছিল। টিকার অভাবেই এখন তা দিনে ৩০-৪০ লক্ষে থমকে যাচ্ছে। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের মন্তব্য, ‘‘স্রেফ এক দিন রেকর্ড ছোঁয়ার কেরামতি না-দেখিয়ে কেন্দ্রের উচিত, নিয়মিত টিকার জোগানে মন দেওয়া।’’