প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
কো-উইন থেকে তথ্য চুরি আসলে ওই ব্যবস্থাকে বদনামের চক্রান্ত বলে আজ সরব হল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাদের বক্তব্য, বিশ্বের দরবারে কো-উইনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে নষ্ট করতেই পরিকল্পিত ভাবে তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। যদিও বিরোধীদের পাল্টা অভিযোগ, আধারের পরে কো-উইনের এই তথ্য ফাঁস থেকে স্পষ্ট, মোদী সরকার দেশবাসীর তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতে অক্ষম। কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, সরকার যদি তথ্য সুরক্ষিত রাখতে না-পারে, তা হলে তথ্য নেওয়ার দরকার কী!
কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর আজও জানিয়েছেন, গত কাল টিকা প্রাপকদের যে তথ্য ফাঁস হয়েছিল, তা কোনও ভাবেই কো-উইন-এর তথ্যভান্ডারে সংগৃহীত তথ্য নয়। তাঁর দাবি, ওই তথ্য হয় ভুয়ো, না হয় তৃতীয় পক্ষ অন্য কোনও উৎস থেকে সংগ্রহ করে ফাঁস করা হয়েছে। সাইবার বিশেষজ্ঞ সংস্থা ক্লাউডএসইকে সংবাদমাধ্যমকে কো-উইনে সিঁদ কাটা প্রসঙ্গে জানিয়েছে, টিকাপ্রাপকদের যে তথ্য গত কাল সামনে এসেছে, তা বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, এ যাত্রায় যারা তথ্য চুরির চেষ্টা করেছিল, তারা কো-উইনের মূল পোর্টাল বা ব্যাকএন্ড ডেটাবেস (তথ্যভান্ডার) পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। সম্ভবত অতীতে যে তথ্য চুরি হয়েছিল সেই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ রাশিয়ার একটি সাইবার ক্রাইম ফোরাম দাবি করে, তাদের কাছে তামিলনাড়ু এলাকায় কোউইনে টিকাকরণ সংক্রান্ত যে তথ্য নথিভুক্ত হয়েছিল, তা তাদের কাছে রয়েছে।
বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, তথ্যভান্ডারে থাকা কোন তথ্য এ বার প্রকাশ্যে এল তা স্পষ্ট করুক সরকার। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের কথায়, ‘‘অতীতে যে তথ্য চুরি গিয়েছিল সে ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানানো উচিত সরকারের। তা ছাড়া কী ভাবে সেই তথ্য ফাঁস হয়েছিল তা খুঁজে দেখতে পুলিশের কাছে অভিযোগ কেন দায়ের করা হয়নি?’’ এর কোনও জবাব অবশ্য আজ দেয়নি সরকার।
বিরোধীদের অভিযোগ, কো-উইন কাণ্ড থেকে স্পষ্ট সরকারের কাছে থাকা নাগরিকদের তথ্য মোটেই সুরক্ষিত নয়। ডিজিটাল তথ্যভান্ডারের সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। তিনি বলেন, ‘‘২০১৮ সালে আধারের তথ্য প্রকাশ্যে এসেছিল। যা বিশ্বের অন্যতম বড় তথ্য ফাঁসের ঘটনা। গত বছর এমস হাসপাতালে সাইবার হানার ঘটনা ঘটে। যা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট দেশে সাইবার হামলা ও তথ্য ফাঁসের ঘটনা বাড়ছে। যা রুখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ সরকার।’’ তাঁর খোঁচা, ‘‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র ঢাক পেটাতে ব্যস্ত সরকার। ২০১৮ সালে ২.০৮ লক্ষ সাইবার হামলা হয়েছিল। যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৯১ লক্ষ। যা দেশের সুরক্ষার জন্য বিপদ।’’
বিরোধীরা যখন তথ্য সুরক্ষার দাবি তুলছেন তখন সরকারের যুক্তি, ভারতকে বদনামের লক্ষ্যেই এ ধরনের সাইবার হামলা চালানো হচ্ছে। কো-উইন ব্যবস্থার মাধ্যমে ১০০ কোটি ভারতবাসীর টিকাকরণ সফল ভাবে করা সম্ভব হয়েছিল। অনেক উন্নত দেশ ওই ব্যবস্থা নিজেদের দেশে চালু করতে আগ্রহী। তা ভেস্তে দিতেই দেশ-বিরোধী শক্তি পরিকল্পিত ভাবে তথ্য ফাঁস করে কো-উইন ব্যবস্থার বদনামে সক্রিয় বলে দাবি চন্দ্রশেখরের। তাঁর কথায়, ‘‘বর্তমান সময়ে বেশ কিছু কায়েমি শক্তি কো-উইন ব্যবস্থার বদনাম করার লক্ষ্যে সক্রিয় রয়েছে। সাইবার সুরক্ষার লক্ষ্যে যে দল কাজ করছে তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে, কারা এর পিছনে রয়েছে।। তবে প্রাথমিক তদন্তের পর বলা যেতে পারে, টেলিগ্রাম সমাজমাধ্যমে যে তথ্য সর্বসমক্ষে এসেছে তা কোনও ভাবেই কো-উইন থেকে নেওয়া হয়নি।’’