ফাইল চিত্র।
ব্রিটিশ সরকারের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পক্ষেই দাঁড়াল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
গত আট বছরে মোদী সরকারের আমলে একের পর এক ঘটনায় সরকারের সমালোচক থেকে ছাত্রনেতা, সাংবাদিক, সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা করে এর অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ১৯৬২ সালে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে সিলমোহর দিলেও, মোদী জমানায় এর অপব্যবহারের অভিযোগের জেরে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে ফের চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে একগুচ্ছ মামলা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় সরকার আজ সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে যুক্তি দিয়েছে, আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ কোনওভাবেই সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় পুনর্বিবেচনা করার যুক্তি হতে পারে না। কেন্দ্রের বক্তব্য, আইনের অপব্যবহার রোখার উপায় হল প্রতিটি অভিযোগকে আলাদা আলাদা ভাবে বিচার করা। ছয় দশক আগে সাংবিধানিক বেঞ্চের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বহু পুরনো আইনকে সন্দেহ করা নয়। সাম্যের অধিকার, জীবনের অধিকারের মতো সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন বিচার করেই সাংবিধানিক বেঞ্চ রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে বহাল রেখেছিল।
১৯৬২ সালে কেদারনাথ সিংহ বনাম বিহার সরকারের মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পক্ষে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে প্রশ্ন ওঠে, পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের রায় তাঁরা বিচার করতে পারেন কি না! নাকি পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের রায় পুনর্বিবেচনা করার জন্য তা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো উচিত?
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেছিলেন, এ নিয়ে আর নতুন করে বিচার-বিবেচনা করার দরকার নেই। ১৯৬২-র রায়ই বহাল রাখা হোক। মামলাকারীদের প্রশ্ন ছিল, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দমন করতে তৈরি ব্রিটিশ আইনের প্রয়োজন রয়েছে কি? বেণুগোপালের যুক্তি ছিল, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বহাল রেখে তার অপব্যবহার রুখতে কিছু নির্দেশিকা তৈরি করে দেওয়া হোক। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সেদিন বলেছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের অবস্থান ও কেন্দ্রের অবস্থান আলাদা হতে পারে। তিনি দু’দিনের মধ্যে কেন্দ্রের অবস্থান হলফনামা দিয়ে পেশ করবেন। এদিন দেখা গেল, কেন্দ্রের সরকারি অবস্থানও কার্যত একই।
কেন্দ্র আজ সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের রায় তিন বিচারপতির বেঞ্চের উপরে প্রযোজ্য। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারা বা রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলার শুনানি তিন বিচারপতির বেঞ্চে হতে পারে না। তাছাড়া সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। আধুনিক সাংবিধানিক নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তার প্রয়োগ হয়েছে। সেই রায় পুনর্বিবেচনা করতে হলে যাবতীয় মামলা পাঁচ বিচারপতি বা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠাতে হবে।
আগামী মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে শুনানি হবে। আইনজীবীরা মনে করছেন, কেন্দ্র বৃহত্তর বেঞ্চে মামলা পাঠানোর পক্ষে সওয়াল করে কার্যত গোটা প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে। কারণ, পাঁচ বিচারপতি বা আরও বড় বেঞ্চ গঠন করতে সময় লাগবে। সেখানে শুনানি হতেও দেরি হবে।