PM Narendra Modi

প্রান্তিক ও বিপন্ন জনজাতির জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ

চলতি অর্থবর্ষ থেকে আগামী তিন বছরের জন্য ২৪ হাজার ১০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী জনমন’ কর্মসূচির জন্য। যাতে কেন্দ্রের অংশীদারি ১৫,৩৩৬ কোটি।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪১
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

রামমন্দির উদ্বোধনের আগেই গোটা দেশের প্রান্তিক এবং বিপন্ন জনজাতি গোষ্ঠীভুক্ত মানুষের (পার্টিকুলারলি ভার্নারেবল ট্রাইবাল গ্রুপস) কাছে সব ধরনের পরিষেবা পৌঁছে দিতে বিপুল বরাদ্দের পৃথক কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। এ কাজে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের সব ক’টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত এলাকাগুলিকে যুক্ত করা হয়েছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই ‘প্রধানমন্ত্রী জনমন’ কর্মসূচি পালিত হবে কেন্দ্রীয় ভাবে। থাকতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেও। সম্প্রতি দেশের ক্যাবিনেট সচিব ভার্চুয়াল বৈঠক করে কর্মসূচিটি সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছেন। সেই বৈঠকে ছিলেন এ রাজ্যের শীর্ষ আমলারাও। প্রসঙ্গত, এ রাজ্যে লোধা এবং টোটো এমন প্রান্তিক বিপন্ন জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে।

Advertisement

এই কর্মসূচির হাত ধরেই প্রধানমন্ত্রী আবাস এবং সড়ক যোজনায় বরাদ্দের শৃঙ্খলমুক্তির আশা করছে এ রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের একাংশ। কারণ, সুবিধা প্রদানের তালিকায় এই দু’টি বিষয়ই রয়েছে। যার বরাদ্দ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে এ রাজ্যের জন্য।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোটে জনজাতি গোষ্ঠীভুক্ত মানুষের মন পেতে অনেক আগে থেকেই সক্রিয় থেকেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। দেশ এবং রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে জনজাতি গোষ্ঠীভুক্ত এবং পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষজনকে এগিয়ে দিয়েছে তারা। সেই দিক থেকে লোকসভা ভোটের আগে জনজাতিভুক্ত মানুষের জন্য এই কর্মসূচির তাৎপর্য ভিন্ন। তবে এই কর্মসূচি সব জনজাতি গোষ্ঠীগুলির জন্য নয়। যে জনজাতি গোষ্ঠীগুলি সবচেয়ে বিপন্ন এবং প্রান্তিক, সেগুলি থাকবে এর আওতায়।

Advertisement

চলতি অর্থবর্ষ থেকে আগামী তিন বছরের জন্য ২৪ হাজার ১০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী জনমন’ কর্মসূচির জন্য। যাতে কেন্দ্রের অংশীদারি ১৫,৩৩৬ কোটি এবং রাজ্যগুলির ভাগে থাকছে ৮৭৬৮ কোটি টাকা। প্রাথমিক ভাবে ১০০টি জেলার প্রান্তিক জনজাতি গোষ্ঠীগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রথম ধাপে আধার কার্ড, জনধন অ্যাকাউন্টের মতো কিছু পরিষেবা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে আয়ুষ্মান ভারত, প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মাননিধি, কিসান ঋণ কার্ডের আওতায় আনা হবে। পরের ধাপে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি, সড়ক, পরিস্রুত পানীয় জল-বিদ্যুতের সংযোগ, শিক্ষা-স্বাস্থ্য পরিষেবা, সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন প্রকল্প, কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদি পরিষেবা দেওয়া হবে। কেন্দ্রের সমীক্ষা বলছে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৮টি রাজ্যে ৭৫টি বিপন্ন প্রান্তিক জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে। তাতে আট লক্ষ পরিবারের ৩২ লক্ষ মানুষ ছড়িয়ে রয়েছেন ২০০টি জেলার ৮০০টি ব্লকে। তবে এ রাজ্যে এখনও আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পটি গৃহীত হয়নি। তাই এ ক্ষেত্রে কী অবস্থান হবে সরকারের, তা এখনই স্পষ্ট নয়।

ক্যাবিনেট সচিবের বৈঠকে জানানো হয়েছে, গুজরাত, রাজস্থান, তেলঙ্গনা, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের তথ্য সংগ্রহ-সহ যাবতীয় কাজ শেষ। পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে। তবে বিহার এবং মণিপুরে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। ক্যাবিনেট সচিবের বার্তা, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে রাজ্যে একটি কমিটি তৈরি হবে। জেলাশাসকদের নেতৃত্বে থাকবে আর একটি কমিটি যারা কাজের বাস্তবায়নে নজর রাখবে। ব্লকস্তরের দলগুলি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে খারাপ ফল করেছিল বিজেপি। ২০১৯ সালের ভোটে বিজেপি বড় ভাবে জিতলেও মধ্য-ভারতের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে খারাপ ফল করে তারা। তার পর থেকেই জনজাতিভুক্ত মানুষজনের দিকে বাড়তি নজর দেয় কেন্দ্র। যার সূত্র ধরে দেশের রাষ্ট্রপতি পদে দ্রৌপদী মুর্মুকে তুলে ধরেছিল কেন্দ্রের শাসক দল।

যদিও এ রাজ্য প্রশাসনের অনেকের দাবি, জনজাতিভুক্ত মানুষজনের সুবিধার্থে ইতিমধ্যেই যাবতীয় পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। বিনামূল্য সামাজিক সুরক্ষা, বিভিন্ন ধরনের পেনশন, বৃত্তি, স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা, শিক্ষার ব্যবস্থা, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধাদান, কৃষকবন্ধু ইত্যাদি প্রত্যেকের মতো সংশ্লিষ্ট অংশের মানুষকে সহযোগিতা করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement