খসড়া আইনে প্রাণীকে ‘পণ্য’ তকমা দেওয়া হয়েছিল। ছবি: প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রবল প্রতিবাদের মুখে প্রাণী ও প্রাণিজাত সামগ্রী আমদানি-রফতানি আইনে সংশোধনীর খসড়া প্রত্যাহার করল কেন্দ্র। খসড়া বিলে জীবন্ত প্রাণী রফতানির অনুমতি, কুকুর-বিড়ালকে ওই আইনের আওতায় আনা ও এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের কিছুটা অধিকার রাজ্যগুলির হাত থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া খসড়া আইনে প্রাণীকে ‘পণ্য’ তকমা দেওয়া হয়েছিল।
৭ জুন দেশবাসীর মত নেওয়ার জন্য খসড়া বিল প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় পশুপালন মন্ত্রক। প্রবল প্রতিবাদের মুখে ২০ জুন খসড়া প্রত্যাহার করে নেয় তারা। একটি অফিস মেমোরেন্ডামে মন্ত্রক জানায়, ‘‘আলোচনার সময়ে বোঝা গিয়েছে খসড়াটি বোঝার জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। অনেকেই পশুকল্যাণ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি লিখেছেন। ফলে এ নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন।’’
পশু অধিকার রক্ষা কর্মী গৌরী মাওলেখির মতে, ‘‘প্রাণীকে পণ্য তকমা দিয়ে আমদানি-রফতানি তাদের উপরে নিষ্ঠুরতারই প্রমাণ। বহু ভারতীয় প্রাণীকে এমন আবহাওয়ার দেশে রফতানি করা হচ্ছে, যে দেশের আবহাওয়া তাদের পক্ষে উপযোগী নয়।’’ আর একটি পশুপ্রেমী সংস্থার প্রধান ভারতী রামচন্দ্রনের মতে, ‘‘এই বিলের মাধ্যমে ভারতে মাংসের জন্য এবং অন্য উদ্দেশ্যে পালিত লক্ষ লক্ষ প্রাণীকে নিষ্ঠুরতার দিকে ঠেলে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী, মাংসের চাহিদা মেটাতে বছরে বিভিন্ন দেশে প্রায় ২০ লক্ষ প্রাণীকে রফতানি করা হয়।’’
তবে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিভিন্ন আমদানি-রফতানি নীতির মাধ্যমে এখনই ভারত থেকে কোটি কোটি টাকা অর্থমূল্যের ভেড়া, ছাগল, গরু-মোষ, হাঁস, মুরগি, টার্কি রফতানি করা হয়। বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, জীবন্ত ছাগল রফতানিতে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়। পশ্চিম এশিয়ায় ছাগল রফতানি করা হয়। সাফল্যের নজির হিসেবে ভারতীয় বন্দরগুলি খনিজ দ্রব্যের পাশাপাশি জীবন্ত প্রাণী রফতানির তথ্যও পেশ করে।
পশুপ্রেমীদের মতে, এই খসড়া বিলে কুকুর-বিড়ালকে অন্তর্ভুক্ত করায় প্রতিবাদ তীব্র হয়েছে। কারণ, তাদের গৃহপালিত প্রাণী হিসেবেই দেখা হয়। এ ভাবে ভারতের পথকুকুরের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু এখনও বিভিন্ন নীতির অধীনে যে গরু-মোষ, শুয়োর ও ছাগল রফতানি করা হয় তাদেরও যাত্রাপথে প্রবল যন্ত্রণার মধ্যে পড়তে হয় বলে দাবি পশুপ্রেমীদের। কারণ, তাদের যে ভাবে খাঁচায় গাদাগাদি করে রফতানি করা হয় তাতে অনেক ক্ষেত্রে নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা পর্যন্ত থাকে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে মানুষের পাশাপাশি পশু পরিবহণ করায় মানবদেহেও রোগ সংক্রমণেরআশঙ্কা থাকে।