ফাইল চিত্র।
গত সপ্তাহে পেরিয়ে গিয়েছে ১০০ কোটি ডোজ়ের মাইলফলক। তবু টিকাকরণে যে প্রত্যাশিত গতি আসছে না, তা কার্যত মেনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বিশেষ করে দ্বিতীয় দফা টিকাকরণের প্রশ্নে তুলনামূলক ভাবে ভারত পিছিয়ে থাকায় গত শনিবার রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে টিকাকরণের গতি বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। কোভিশিল্ডের দুই ডোজ়ের মধ্যে বর্তমান ১২-১৬ সপ্তাহের ব্যবধান কমিয়ে আনার চিন্তাও শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকে।
এ যাবত দেশের মোট টিকাকরণে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে কোভিশিল্ড। গত জুন মাসে কার্যকারিতা বাড়াতে কোভিশিল্ডের দুই টিকার মধ্যে ব্যবধান আট সপ্তাহের পরিবর্তে বাড়িয়ে ১২-১৬ সপ্তাহ করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। টিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতেই ওই সিদ্ধান্ত বলে যুক্তি দিলেও, বিরোধীদের অভিযোগ ছিল দেশে সে সময়ে টিকার স্বল্পতা থাকায় দুই টিকার মধ্যে সময়ের ব্যবধান বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক দেখেছে, জুন মাসে নেওয়া ওই সিদ্ধান্তের দীর্ঘকালীন প্রভাব পড়ে দ্বিতীয় দফা টিকাকরণে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘আগে যারা আট সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয় টিকা নিয়ে নিতেন, তাদের এখন টিকার জোগান থাকা সত্ত্বেও তিন-থেকে চার মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’’
দেশে এখন পর্যন্ত ১০৩ কোটি ডোজ় টিকাকরণ হয়েছে। যার মধ্যে ৭২ কোটি দেশবাসী প্রথম ডোজ়ের টিকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন মাত্র ৩০.৮৬ কোটি মানুষ। তা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী থেকে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি— অধিকাংশের মতে, সরকার একশো কোটি টিকা নিয়ে প্রচারের ঢাক পেটালেও, বাস্তবে মোট টিকাপ্রাপকদের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষ দুই ডোজ়ের টিকা পেয়েছেন। যার অর্থ দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ২১-২২ শতাংশ মানুষই টিকার দুই ডোজ় পেয়েছেন। বিরোধী দলগুলির মতে, টিকা দিয়ে দেশবাসীকে সুরক্ষিত করার প্রশ্নে এখনও অর্ধেক রাস্তা পার হতে পারেনি মোদী সরকার।
বিদেশে মর্ডানা, ফাইজ়ারের মতো প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে ২৮ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া যায়। ভারতীয় প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেও দুই ডোজ়ের ব্যবধান চার সপ্তাহের। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে ওই ব্যবধান আট সপ্তাহের জন্য হলেও ভারতে কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে ১২-১৬ সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ় নিতে পারেন টিকাপ্রাপকেরা।
স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, কোভিশিল্ডের দুই টিকার ব্যবধান যদি কম থাকত, তা হলে অনেক বেশি সংখ্যক লোক দ্বিতীয় ডোজ় নিতে সক্ষম হতেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের মতে, সেই কারণে নতুন করে কোভিশিল্ডের দুই টিকার ব্যবধান কমানো যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে মন্ত্রকে। বিশেষ করে যেখানে কোভিশিল্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার ব্যবধান আটের পরিবর্তে ১২-১৬ সপ্তাহ করায় কার্যকারিতার দিক থেকে বিশেষ কোনও ফারাক দেখা যায়নি। এ বিষয়ে দীপাবলির পরে বৈঠকে বসতে পারে টিকা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেখানে দুই ডোজ়ের ব্যবধান কমানো নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।