ফাইল চিত্র।
যাতায়াতে বিধিনিষেধ অনেকটা শিথিল হলেও ফেরেনি মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ। দোকানপাটও বিশেষ খোলেনি। কিন্তু রাজ্যের মর্যাদা হারানোর পর থেকে কাশ্মীরে সব চেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের সঙ্গে বাসিন্দাদের অনাস্থার সম্পর্ক। কর্তাদের অনেক ঘোষণার সঙ্গে বাসিন্দাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা যে মিলছে না, এমন অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ উদাহরণ শুক্রবার জঙ্গি হানায় জখম বালিকার চিকিৎসার বিষয়ে সরকারি ঘোষণা।
প্রশাসন জানিয়েছিল, প্রয়োজনে পাঁচ বছরের মেয়ে আসমা জানকে এয়ারলিফ্ট করে দিল্লির এমস-এ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হবে। এর পরে দিল্লি থেকে ‘সরকারি সূত্রে’ সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের হস্তক্ষেপে আসমাকে এমস-এ ভর্তি করা হয়েছে। শ্রীনগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার শহিদ ইকবাল চৌধরিও টুইট করেন, ‘আসমাকে এমস-এ ভর্তি করা হয়েছে। আমরা তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’
শ্রীনগরের ‘বোন অ্যান্ড জয়েন্ট হসপিটাল’-এ ভর্তি আসমার বাবা আর্শিদ আহমেদ রাঠের সোমবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, মেয়ে এখনও শের-ই কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেই ভর্তি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাকে এমস-এ নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনই নেই। গুলি তার পায়ের বুড়ো আঙুল ছুঁয়ে গিয়েছে। ধমনী কাটেনি। সে এখন ভাল আছে। রাঠের বলেন, ‘‘আসমাকে এমস-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর দেখেছি। কিন্তু নিয়ে যেতে হয়নি।’’
শুক্রবারের জঙ্গি হানা নিয়েও মুখ খুলতে চাইছেন না আর্শিদ বা তাঁর উল্টো দিকের দু’টি বেডে থাকা কোমরের নীচে গুলি বেঁধা মহম্মদ আশরাফ এবং মহম্মদ রমজান। পুলিশের এডিজি মুনির আহমেদ খান সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে জঙ্গিরাই গুলি চালিয়েছে।’’ কিন্তু সে দিনের গুলিবিদ্ধরা ওই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চান না। আশরফ বলেন, ‘‘তারা কারা আমরা জানি না। এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে পালিয়ে গেল।’’ এর বেশি কিছু বলতে তাঁরা রাজি নন।
পুলিশের বক্তব্য, আর্শিদের বাবা হামিদুল্লা রাঠেরের খোঁজেই এসেছিল জঙ্গিরা। সোপোরে তাঁর ফলের দোকান আছে। আর্শিদ বাড়ি থেকে বেরোনো মাত্র জঙ্গিরা গুলি ছুড়তে থাকে। তাতে তিন জন ছাড়া আসমা জখম হয়।
এর মধ্যেই উপত্যকায় তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে জনপ্রিয় কাশ্মীরি গায়ক আদিল গুরেজিকে মুম্বইয়ে ফ্ল্যাট থেকে বার করে দেওয়ার ঘটনায়। কার্ফু জারি হওয়ায় বান্দিপোরার গুরেজে বাড়িতে এসে আটকে পড়েছিলেন আদিল। এক মাস পরে মুম্বইয়ে ভাড়া করা ফ্ল্যাটে যাওয়ার পরে তার মালিক বলেন, এখনি তাঁকে ঘর খালি করে দিতে হবে। আদিল পুলিশে গেলে
মালিক তাঁকে আপাতত থাকতে দিতে রাজি হলেও আবাসনের অন্য বাসিন্দাদের চাপে শেষ পর্যন্ত ফ্ল্যাট ছাড়তেই হয়েছে আদিলকে। আদিল জানিয়েছেন— প্রতিবেশীরা তো বটেই, মুম্বইয়ে তাঁর বন্ধুরাও এখন তাঁকে এড়িয়ে চলছেন।