বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী। পিটিআই
পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে নিরন্তর। কিন্তু সমাধান নেই।
সংক্রমণ রুখতে টিকাকরণ বাড়ানোর জন্য রাজ্যগুলিকে লাগাতার পরামর্শ দিয়ে চলেছে কেন্দ্র। কিন্তু সেই টিকার জোগান কোথা থেকে আসবে, তার কোনও দিশা নেই সরকারের কাছে। এই মুহূর্তে দেশের ৫৫টি জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি। যার মধ্যে ৩৫টি জেলা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে। তাই সংক্রমণে রাশ টানতে ওই আট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আজ ভার্চুয়াল বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই বৈঠকেও তিনি টিকাকরণ প্রক্রিয়ায় জোর দেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, অরুণাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু বৈঠকে টিকার জোগান নিশ্চিত করার আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রায় একই সুর ছিল অন্যদেরও। কিন্তু টিকার জোগান নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী।
কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের কথায়, “টিকাকরণ নিয়ে সরকারের দাবি ও বাস্তব চিত্রের মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য রয়েছে।” বিরোধীদের মতে, সংক্রমণ রুখতে প্রধানমন্ত্রী টিকাদান বাড়াতে বললেও প্রতিষেধকের যথেষ্ট জোগান না-থাকায় সরকারের টিকাকরণ নীতির ব্যর্থতাই প্রকট হয়ে উঠেছে।
দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যোগাযোগ কিছুটা কম থাকায় কোভিডের প্রথম ধাক্কার প্রভাব তুলনায় কম পড়েছিল উত্তর-পূর্বে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সিকিম-সহ এই অঞ্চলের আট রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতেও। এ কারণে আলাদা করে উত্তর-পূর্বের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আজ বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রের নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
অমিত শাহ।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বে টিকাকরণ প্রক্রিয়াকে তরাণ্বিত করার জন্য উদ্যোগী হতে বলেন। বিশেষ করে যে সব অঞ্চলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে সেখানে।
টিকাকরণ নিয়ে কিছু মানুষের মনে যে ভ্রান্ত ধারণা হয়েছে, তা মোকাবিলা করতে আস্থা অর্জনেও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কাজে সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশিষ্ট জন আর বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন।
বিরোধীদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী টিকাকরণে গতি আনার পরামর্শ দিচ্ছেন বটে রাজ্যগুলিকে, কিন্তু টিকার জোগান কোথায়? টিকাকরণ নীতি অনুযায়ী রাজ্যগুলিকে প্রয়োজন মতো টিকা জোগাতে যে কেন্দ্র দায়বদ্ধ, সেটা যেন প্রধানমন্ত্রী ভুলে না যান। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “কোনও এলাকায় টিকার অভাবে সংক্রমণ যদি তীব্র আকার নেয়, তা হলে প্রধানমন্ত্রী তার দায় এড়াতে পারেন না।” সূত্রের খবর, বিগত দিনগুলির মতো আজও হিমন্তবিশ্ব, পেমার মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী টিকার স্বল্প জোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন। কেন্দ্র দ্রুত যথেষ্ট পরিমাণ প্রতিষেধক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বিরোধীদের বক্তব্য, গোড়া থেকেই টিকাকরণ নীতিতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে মোদী সরকারের। গত সাত মাসে দফায় দফায় টিকা নীতিতে পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশের জন্য টিকার উৎপাদন তেমন বাড়েনি। কেন্দ্রের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, প্রতি দিন দেশে অন্তত ৫০ লক্ষ টিকা কম দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের কাছে দরবার করেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকা না-পাওয়ায় বিভিন্ন রাজ্যে টিকাকরণ কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
কংগ্রেস নেতা চিদম্বরমের কথায়, “টিকাকরণের পরিস্থিতি আদৌও আশাপ্রদ নয়। এক সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন, কিন্তু এখনও টিকা বাড়ন্ত রাজ্যগুলিতে। পরিস্থিতি বিন্দুমাত্র পাল্টায়নি। দেশে যথেষ্ট প্রতিষেধক রয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে তা সঠিক নয়। ভারতে প্রতিষেধক উৎপাদনের সংখ্যা থেকে রাজ্যগুলিকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে প্রতিষেধক সরবরাহের যে দাবি করা হচ্ছে, তারও কোনও সারবত্তা নেই।”
ওড়িশা জানিয়েছে তাদের ৩০টির মধ্যে ২৪টি জেলায় প্রতিষেধক বাড়ন্ত। একই অবস্থা দিল্লির। গত কাল গোটা দেশে ৩৩ লক্ষ প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। সরকারের দাবি, এ বছরের মধ্যে দেশের সব পূর্ণবয়স্ককে টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য রয়েছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে হলে প্রতি দিন ৮০ লক্ষ ডোজ় প্রতিষেধক দিতে হবে। কিন্তু প্রতি দিন ৫০ লক্ষ টিকা কম দেওয়া হলে কোনও ভাবেই সেই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব নয়।
টিকাকরণের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে সংক্রমণ রুখতে মাইক্রো-কনটেনমেন্ট জ়োন বানিয়ে সংক্রমণকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে রাখার উপরে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কনটেনমেন্ট জ়োনগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি, পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলেছেন। করোনাভাইরাস কী ভাবে চরিত্র বদল করছে, তার উপরেও কঠোর নজরদারি চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন শৈলশহরে পর্যটকেরা যে রকম ভিড় জমিয়েছেন, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন, কোথাও ভিড় না-জমাতে। এতে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পায়। এটা আমাদের সকলকে
বুঝতে হবে।”