কেমন হবে নতুন সংসদ ভবন, তার নকশা।
আর বছর দুয়েকের অপেক্ষা। ২০২২ সালে, স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে খুলে যেতে পারে নতুন সংসদ ভবনের দরজা, তেমনই ইচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের। সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই কাজ এগোবে। ৮৬১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা দরপত্র দিয়ে নতুন ভবন তৈরির বরাত পেয়েছে টাটা প্রোজেক্টস। এখনকার সংসদ ভবনের পাশেই ৯.৫ একর জায়গায় গড়ে উঠবে ত্রিভূজাকৃতি নতুন ভবন। যার নকশা বানিয়েছেন পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত স্থপতি বিমল পটেল। এখন এই জায়গায় রয়েছে সংসদের অ্যানেক্স বিল্ডিং।
বর্তমানে লোকসভায় রয়েছে ৫৫২টি আসন, রাজ্যসভায় আসন সংখ্যা ২৪৫। নতুন ভবনে লোকসভায় ৮৭৬ জন আর রাজ্যসভায় ৪০০ জনের বসার জায়গা হবে। যৌথ অধিবেশনের সময় লোকসভায় ১৩৫০ জন সাংসদ একসঙ্গে বসতে পারবেন। ২১ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
সংসদের বর্তমান ভবনটির নির্মাণ শেষ হয় ১৯২৭ সালে। নকশা এঁকেছিলেন দুই ব্রিটিশ স্থপতি স্যর এডউইন লুটিয়েন্সএবং স্যর হার্বার্ট বেকার। নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর সুপ্রিম কোর্টকে হলফনামায় জানিয়েছে, বর্তমান ভবনের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে। ভবনটি অগ্নিসুরক্ষা বিধি মেনে তৈরি নয়, এটি আধুনিক নির্মাণের নানা চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। এর সঙ্গে স্থান সঙ্কুলানের সমস্যাও রয়েছে।
জনসংখ্যার সঙ্গে লোকসভার আসনসংখ্যা বাড়ার কথা। কিন্তু ১৯৭১-এর জনগণনার পর থেকে কার্যত লোকসভার সদস্য সংখ্যা একই রয়েছে। ২০২৬ সালের পর বাড়তে পারে লোকসভার আসন সংখ্যা। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েও নতুন ভবন গড়ার সিদ্ধান্ত, বলছে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক।
নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ বৃহত্তর সেন্ট্রাল ভিস্তা রিডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের অন্তর্গত। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা রাস্তার নাম রাজপথ বা সেন্ট্রাল ভিস্তা। এর দুই পাশে রয়েছে ৪৭টি ভবন, যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রক। ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই চত্বরের খোলনলচে বদলে ফেলা হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে গোটা প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আনুমানিক খরচ ২০ হাজার কোটি টাকা। এই আধুনিকীকরণ প্রকল্পে রাজপথের দু’ধারে গড়ে তোলা হবে ১০টি ভবন, যাতে ঠাঁই হবে ৫১টি মন্ত্রকের।
প্রশ্ন রয়েছে এই প্রকল্পের পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়ে। ওয়ান গ্রেড হেরিটেজ সাইটে ঐতিহাসিক স্থাপত্য ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। প্রকল্পের নকশা তৈরি করছে গুজরাতের সংস্থা ‘এইচসিপি ডিজাইন’। কী ভাবে বাছা হল এই সংস্থাকে বিতর্ক রয়েছে তা নিয়েও।
গত এপ্রিলে লকডাউনের মধ্যেই সেন্ট্রাল ভিস্তা কমিটির বৈঠকের পর নতুন সংসদ ভবন তৈরির ছা়ড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী লাটিয়ান্স দিল্লিকে ‘মোদীর দিল্লি’-তে রূপান্তরিত করতে চান। সেই কারণেই পরিযায়ী শ্রমিকদের বদলে দিল্লির ভোলবদল তাঁর অগ্রাধিকারে।