ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ এবং তাদের সম্পদ বিক্রিতে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল ‘আত্মনির্ভর প্যাকেজ’ এবং বাজেটেই। বুধবার আরও এক ধাপ এগিয়ে এই প্রথম সংখ্যায় তার ‘প্রাথমিক লক্ষ্য’ ঘোষণা করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দাবি, ১০০টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ ও তাদের ‘অব্যবহৃত’ সম্পত্তি বেচে প্রায় ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা রাজকোষে ভরাকে পাখির চোখ করছেন তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, ব্যবসা করা যে আদৌ সরকারের কাজ নয়, ফের সে কথা মনে করিয়েছেন তিনি।
শুধু এ বছরেই বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারিকরণ থেকে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কেন্দ্র। তাই সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, এ ক্ষেত্রে ১০০টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সম্পত্তির কথাই মূলত বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, না-হলে মোট মূল্য হবে ২.৫ লক্ষ কোটির বহু গুণ। অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে প্রধানমন্ত্রী এ ভাবে বেসরকারি ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দেওয়ায়, শিল্পমহল ও বিশেষজ্ঞদের একাংশ খুশি। তেমনই বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, পছন্দের শিল্পপতিদের জলের দরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সম্পদ কেনার বন্দোবস্ত করতেই সরকারের এই আগ্রহ।
গত ছ’বছরে মোদী সরকার একটিও বড় মাপের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ করতে পারেনি। এয়ার ইন্ডিয়া, বিপিসিএল বেচে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেক আগে নেওয়া হলেও, তার রূপায়ণ বহু দিন আটকে। ফলে প্রশ্ন, মোদী মুখে ১০০ সংস্থা ও সম্পত্তি বিক্রির কথা বললেও, সরকার তা করে দেখাতে পারবে কি?
আজ বাজেটের বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত রূপায়ণ নিয়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সেই আশঙ্কা ওড়ানোর চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, ব্যবসা বা ‘বিজনেস’-এ থাকাটা সরকারের ‘বিজনেস’ বা কাজ নয়। বরং সরকার সরে দাঁড়ালে, বেসরকারি ক্ষেত্র সেই অভাব পূরণ করবে। নতুন লগ্নি আসবে। বিশ্বমানের ব্যবসার পদ্ধতি, দক্ষ কর্মী ও দক্ষ পরিচালনায় উপকৃত হবে দেশের অর্থনীতি।
তাঁর মতে, যখন এই সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা তৈরি করা হয়েছিল, তার থেকে পরিস্থিতি এখন অনেক আলাদা। ফলে করদাতাদের টাকায় তেমন বহু সংস্থা বর্তমানে চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন। বরং সেই টাকা গরিবের হাতে যেতে পারে। বেসরকারিকরণ ও আধুনিকীকরণের দৌলতে হতে পারে নতুন কর্মসংস্থান।
ডজন দুয়েক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাদে কেন্দ্র যে বাকি সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দিতে চায়, তা বাজেটেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এখন তেমন সংস্থার সংখ্যা ৩০০-র বেশি। অর্থমন্ত্রী চারটি কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, ও সংবেদনশীল ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করেছিলেন। বলেছিলেন, এই ক্ষেত্রগুলিতে খুব বেশি হলে গোটা চারেক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থাকবে। বাকি সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রের লক্ষ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংখ্যা দু’ডজনের আশেপাশে নামিয়ে আনা।
অর্থমন্ত্রী যে চারটি ক্ষেত্রকে কৌশলগত বা সংবেদনশীল বলে চিহ্নিত করেছিলেন, সেগুলি হল— (১) পরমাণু বিদ্যুৎ, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা (২) পরিবহণ ও টেলি-যোগাযোগ (৩) বিদ্যুৎ, তেল, কয়লা ও খনি (৪) ব্যাঙ্ক, বিমা ও আর্থিক পরিষেবা। এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই চারটি ক্ষেত্রেও সরকারের উপস্থিতি হবে নগণ্য। করদাতাদের টাকায় লোকসানে চলা সংস্থা অনেক দিন চলেছে। এখন এই সব সংস্থা চালানো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তার প্রয়োজনও নেই।’’
প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই ‘প্রতিজ্ঞার’ পরে নতুন অর্থবর্ষে বেসরকারিকরণ মারফত ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা রাজকোষে তোলার পরিকল্পনা কতটা সফল হয়, সে দিকে নজর অনেকের।