Bangladesh Unrest

শরণার্থীদের দরজা খুলতে নারাজ দিল্লি

বাংলাদেশে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, উদ্ভূত অশান্তির ফলে এক কোটি শরণার্থী পালিয়ে এ দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে পারেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৪ ০৯:০০
Share:

অশান্ত বাংলাদেশ। —ফাইল চিত্র।

নয়াদিল্লি, ৮ অগস্ট: সীমান্তে রোজ বাংলদেশিদের ভিড় বাড়লেও শরণার্থীদের জন্য এই মুহূর্তে দরজা হাট করতে নারাজ নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বাংলাদেশে আক্রান্ত হিন্দু শরণার্থীদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সওয়াল করলেও, সাউথ
ব্লক এই মুহূর্তে এমন কোনও পদক্ষেপ করতে রাজি নয়, যাতে নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গোড়াতেই তিক্ত হয়ে ওঠে।

Advertisement

বাংলাদেশে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, উদ্ভূত অশান্তির ফলে এক কোটি শরণার্থী পালিয়ে এ দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে পারেন। বিজেপি নেতাদের মতে, এই শরণার্থীদের অধিকাংশই হিন্দু। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যও বাংলাদেশের অত্যাচারিত হিন্দুদের পাশে মানবিক মুখ নিয়ে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, যদি কোনও হিন্দু ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে বাধ্য হন, সে ক্ষেত্রে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ)-তে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

কিন্তু রাজ্যে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের লক্ষ্যে বিজেপি শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ালেও কার্যত বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘যে কোনও সরকারের দায়িত্ব হল তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব হবে সবার আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে শরণার্থীদের মনে আস্থা ফেরানো।’’ এই মুহূর্তে যদি বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের এ দেশে চলে আসার ঢল নামে, তা হলে কোনও ভাবেই সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে না বলে অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে সাউথ ব্লক। কারণ, এতে একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন, সীমান্ত খুলে দিলে বিপুল জনসংখ্যার চাপ বাড়বে পশ্চিমবঙ্গের উপরে। আগামী দিনে এই শরণার্থীদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্যকেই। সীমান্ত খুলে দিলে হিন্দুদের পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণে উৎপীড়নের শিকার হওয়া আওয়ামী লীগের মুসলিম নেতা-কর্মীদেরও ভারতে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তা-ও কাম্য নয় ভারতের কাছে। কারণ এতে নতুন করে সীমান্ত এলাকায় জনবিন্যাসের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

Advertisement

তা ছাড়া সাউথ ব্লকের মতে, বাংলাদেশে জনতার চাপে ক্ষমতা পরিবর্তন হয়েছে। জনতার সেই ইচ্ছেকে গোড়া থেকেই মান্যতা দিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি শুরু থেকেই বলে এসেছে যে, তারা জনতার স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেবে। বাংলাদেশে আজই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে সেখানে নির্বাচনও হবে। এই আবহে প্রতিবেশী দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর ভারতে চলে আসাটা নয়াদিল্লির কাম্য নয়। তাই ভারত চাইছে, দ্রুত যেন বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এ দিকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে থাকা বিএসএফ জানিয়েছে, গত দু’দিনে বেশ কিছু মানুষ সীমান্তে এসে পৌঁছলেও, ভিসা ছাড়া তাঁদের ভারতে ঢুকতে দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। তবে যাঁদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে, তাঁদের সীমান্ত পেরোতে কোনও সমস্যা নেই।

তাই রাজ্য বিজেপির নেতারা যতই শরণার্থী বাংলাদেশি হিন্দুদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে সরব হন না কেন, সরকারি শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক স্তরে নানা ধরনের তরজা চলতেই পারে। কিন্তু নীতির ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই নিজের অবস্থান থেকে সরবে না নয়াদিল্লি। যে কোনও মূল্যে অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীদের ভারতে আসা রোখা হবে। আপাতত সেই অবস্থান নিয়েই চলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement