ফাইল চিত্র।
দোহায় তালিবান নেতার সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রদূত বৈঠক করলেও তালিবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী সরকার এখনই অবস্থান স্পষ্ট করছে না। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতোই ভারত দেখে নিতে চাইছে, আফগানিস্তানে তালিবান কী ভাবে সরকার গঠন করে। সেই সরকারে সকলের প্রতিনিধিত্ব থাকে কি না।
আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘‘আমরা এখনও আফগানিস্তানের পরবর্তী সরকারের প্রকৃতি কী হবে, তার কোনও বিশদ তথ্য বা খুঁটিনাটি জানি না।’’ সোমবার দোহায় কাতারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তলের সঙ্গে তালিবান নেতা শের মহম্মদ আব্বাস স্তানিকজ়াইয়ের বৈঠক হয়। বাজপেয়ী জমানায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের আইসি-৮১৪ বিমান অপহরণ কাণ্ডের সময় শেষ বার তালিবানের সঙ্গে ভারতের খাতায়-কলমে বৈঠক হয়েছিল। ২২ বছর পরে ফের ভারত তালিবানের সঙ্গে বৈঠকে বসায় বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, ভারত কি তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে? এখন থেকে কি আর তালিবানকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে দেখা হবে না? না কি মোদী সরকারও এখন থেকে ভাল তালিবান, খারাপ তালিবানের বাছবিচার করতে চলেছে? তালিবানের সঙ্গে আগামী দিনেও ভারতের বৈঠক চলবে কি না, সে বিষয়ে ভারতের পরিকল্পনা কি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র এর উত্তরে বলেছেন, ‘‘আমি কোনও জল্পনায় যেতে চাই না। এখানে হ্যাঁ বা না-এর কোনও প্রশ্ন নেই। আমাদের লক্ষ্য হল, আফগানিস্তানের মাটি যেন ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ বা সন্ত্রাসবাদের জন্য ব্যবহৃত না হয়।’’ সোমবার দোহায় ভারতের রাষ্ট্রদূতও এ বিষয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। তালিবানের তরফে ইতিবাচক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল। তালিবানের সঙ্গে বৈঠকে বসে তাদের এক প্রকার স্বীকৃতিই দেওয়া হল কি না, সে প্রশ্নে মুখপাত্রর জবাব, ‘‘দোহার বৈঠককে শুধু যেটুকু হয়েছে, তার মধ্যেই রাখা হোক। এখনও সবে শুরুর দিন চলছে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ হল, তালিবানের তরফে ভারতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। বিদেশ মন্ত্রক বলেছিল, তালিবানের তরফেই বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে তালিবানের তরফে ভারতকে কী বলা হয়েছে, তা নিয়ে বিদেশ মন্ত্রক মুখ খুলতে চায়নি।
গত সপ্তাহে কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের পর থেকে বিমান চলাচলও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে উদ্ধারকার্যও বন্ধ। বাগচী জানান, ভারতের অগ্রাধিকার হল, এখনও যে সব ভারতীয় আটকে রয়েছেন, তাঁদের উদ্ধার করা। তবে কত জন আটকে রয়েছেন, তার কোনও সংখ্যা তিনি জানাননি। তাঁর দাবি, সিংহভাগই দেশে ফিরে এসেছেন। বিদেশ মন্ত্রকের আফগান সেল তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। তিনি বলেন, ‘‘এখন কাবুলে বিমান চলাচল বন্ধ। বিমান চালু হলেই উদ্ধারের কাজ শুরু হবে।’’ সূত্রের খবর, কাবুল বিমানবন্দর চালু করা নিয়ে কাতার সরকারের সঙ্গে তালিবানের কথা চলছে।
ভারতীয়দের পাশাপাশি যে সব আফগান হিন্দু ও শিখদের উদ্ধার করে ভারতে আনা হয়েছে, তাদের ভারতে কত দিন আশ্রয় দেওয়া হবে বা শরণার্থীর তকমা দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও মোদী সরকার এখনও অবস্থান স্পষ্ট করেনি। সরকারের মন্ত্রীরা এ বিষয়ে নয়া নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু সিএএ-তে এখন ভারতে আসা আফগান শিখ, হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। আপাতত তাঁদের ছ’মাসের ই-ভিসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এ বিষয়ে সরকারের অন্দরমহলে আলোচনা চলছে। যাঁরা গত বছরের মার্চের আগে ভারতে এসে কোভিডের জন্য আটকে পড়েছেন, আজ কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের ভিসার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আফগান নাগরিকদের ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানানো হয়েছে।