India-Bangladesh Relationship

হাসিনা-ইউনূসে দোদুল্যমান দিল্লি

অন্য দিকে শেখ হাসিনার সঙ্গে সরকারি ভাবেই যোগাযোগ রাখছেন ডোভাল এবং তাঁর টিম। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে হাসিনার গোপন আস্তানায় তাঁর সঙ্গে দু’বার সাক্ষাৎ সেরেছেন ডোভাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৪৬
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

এক দিকে শেখ হাসিনা, অন্য দিকে বাংলাদেশের নতুন সরকার। বাংলাদেশ নীতি নিয়ে নয়াদিল্লি আপাতত এ ভাবেই দ্বিধা বিভক্ত।

Advertisement

আপাতত এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার মতো পরিসর পাওয়া গেলেও অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা ধরে রাখা ভারতের পক্ষে রীতিমতো কঠিন বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। তার চেয়েও বড় কথা, এস জয়শঙ্করের নেতৃত্বাধীন বিদেশ মন্ত্রক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের কার্যালয়ের মধ্যেও ঢাকা নীতি নিয়ে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে নয়াদিল্লির উদ্বেগগুলির নিরসনে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসই দেখা যাচ্ছে। বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় বর্মা ফুল নিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরে এসেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে।

অন্য দিকে শেখ হাসিনার সঙ্গে সরকারি ভাবেই যোগাযোগ রাখছেন ডোভাল এবং তাঁর টিম। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে হাসিনার গোপন আস্তানায় তাঁর সঙ্গে দু’বার সাক্ষাৎ সেরেছেন ডোভাল। গত কাল দিল্লির মাটি থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষয়ে দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন হাসিনা, যা ভারতীয় সংস্থার সিলমোহর ছাড়া সম্ভব ছিল না। এর আগে হাসিনার ঘনিষ্ঠ সূত্র বিস্তারিত ভাবে জানায়, তিনি পদত্যাগের পিছনে আমেরিকার হাত দেখছেন। গোটা দিন দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তা চলার পরে আমেরিকায় বসে সেই খবরের সত্যতা অস্বীকার করেন তাঁর পুত্র। কিন্তু ভারতীয় সংস্থার যে অকুন্ঠ সমর্থন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা হাসিনাকে এবং তাঁর ভাষ্যকে ঘিরে রয়েছে, তার ইঙ্গিত তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়।

Advertisement

হাসিনা ভারতে এসেছিলেন জীবনসঙ্কটের মধ্যে, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে। তাঁকে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ দেওয়া হয়েছে, এ কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করেনি নয়াদিল্লি। কিন্তু তাঁর আসার সপ্তাহ গড়ানোর মধ্যেই এ কথা সাউথ ব্লকের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তিনি যত দিন চাইবেন ভারতে থাকতে পারেন। অন্য কোনও রাষ্ট্রে যাবেন কি না, তা হাসিনার উপরেই নির্ভর করছে। এ ব্যাপারে নয়াদিল্লির ঘোষিত বক্তব্য, তিনি ‘ভারতের বন্ধু’। কিন্তু তাঁর সঙ্গে ভারতের এই ‘বন্ধুত্ব’ বিজ্ঞাপিত করার এটা সময় কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশের আবেগ এখনও পুরোপুরি ভাবে আওয়ামী লীগ-বিরোধী। সে দেশে ভারত-বিরোধিতার একটি বড় দিকই হল হাসিনার অতিরিক্ত নয়াদিল্লির দিকে ঝুঁকে থাকার অভিযোগ। ফলে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে, ঢাকার মন জয় করার যে প্রয়াস বিদেশ মন্ত্রক দেখাচ্ছে, আপাতত তার বিপরীতমুখী এই ‘বন্ধুত্বের’ তত্ত্ব, এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

পাশাপাশি এ কথাও বলছে কূটনৈতিক মহল, কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারিত হয় পারস্পরিক জাতীয় স্বার্থের নিরিখে, তথাকথিত ‘বন্ধুত্বের’ আলাদা জায়গা থাকে না। যেমন ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে সেই অর্থে বন্ধুত্বের ইতিহাস নেই, কিন্তু কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আগামী বেশ কিছু দিনের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করলে তাতে ভারতের জাতীয় স্বার্থের কোনও লাভ নেই, বরং ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা।

এই উদ্বেগগুলি থাকা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত এ দেশের নিরাপত্তা সংস্থার বড় অংশ, আওয়ামী লীগের হয়েই ভাষ্য তৈরি করার কথা ভাবছে। অথচ, সীমান্ত নিরাপত্তা, সে দেশে ভারতীয়দের বিপুল বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যকে নিরাপদ রাখা, সে দেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের মতো বিষয়গুলি মোদী সরকারের অগ্রাধিকার। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক যত দ্রুত সম্ভব শুরু করাও প্রয়োজন দিল্লির।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ইতিমধ্যেই বলেছেন, “শেখ হাসিনা ভারতে থাকলেও ওই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্টের কোনও কারণ নেই।” তবে তিনি এ কথা বললেও ভবিষ্যতেও পরিস্থিতি একই থাকবে, এমন ভাবারও কারণ নেই। আপাতত ঢাকার রাজনৈতিক বাস্তবতা সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারই। প্রধানমন্ত্রী মোদী তা বুঝেই ইউনূসের শপথ গ্রহণের পরেই দ্রুত শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement