পশ্চিমবঙ্গ-সহ তিন রাজ্যকে সতর্কবার্তা কেন্দ্রের
India Bangladesh Border

সীমান্তের কাছে ‘জঙ্গি ঘাঁটির’ ছক

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নয়াদিল্লি, ২৯ ডিসেম্বর: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর ভারত-বিরোধী জঙ্গিরা ঘাঁটি গাড়ছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের। গোয়েন্দাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরার মতো রাজ্যে সীমান্তের ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে নিজেদের ‘পাকা ঘাঁটি’ তৈরির কাজে তৎপর রয়েছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি। গোয়েন্দাদের মতে, জেএমবি-র পরিসর দখল করে বেড়ে উঠছে এবিটি। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এখন দুই শিবিরকেই মদত দেওয়া শুরু করেছে। এ নিয়ে অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরাকে সম্প্রতি কেন্দ্র সতর্ক করে দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সবচেয়ে দীর্ঘ, তাই এ রাজ্য নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় কেন্দ্র।

Advertisement

‘পাকা ঘাঁটি’ কী? কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, সীমান্তের কাছে জনভিত্তি বাড়িয়ে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ তৈরি করতে চাইছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। ছড়াতে চাইছে জেহাদি-মনস্কতা।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সীমান্ত এলাকায় সক্রিয়তা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছে আইএসআই। সীমান্ত এলাকায় একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করছে তারা। বর্তমানে এবিটি-র সক্রিয়তা জেএমবি-র তুলনায় বেশি। অসম পুলিশের মতে, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে এবিটি সক্রিয়। সূত্রের মতে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি সতর্কবার্তায় পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু জঙ্গির অনুপ্রবেশের কথা জানানো হয়েছে। এক স্বরাষ্ট্র কর্তার কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে অনুপ্রবেশের ফলে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ, অসমের ধুবুড়ির মতো এলাকাগুলি স্পর্শকাতর হয়ে রয়েছে। জঙ্গিদের নিশানায় রয়েছে চিকেন’স নেকও।” গোয়েন্দাদের মতে, সীমান্তের ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ঘাঁটি থাকলে জঙ্গিরা প্রয়োজনে বাংলাদেশে পালাতে পারবে বা মূল ভূখণ্ডের জনারণ্যে মিশে যেতে পারবে। স্থানীয় পর্যায়ে কিছু এজেন্ট এদের ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে সাহায্য করে।

Advertisement

সম্প্রতি অসম পুলিশ একাধিক এবিটি জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। তাদের মতে, এবিটি-র লক্ষ্য ছিল আরএসএস ও অন্য হিন্দু সংগঠনের নেতাদের হত্যা করা। যদিও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা সেনা গোয়েন্দারা ভিন্নমত। তাঁদের মতে, এখনই নাশকতা ঘটিয়ে সামনে আসার চেয়ে তারা ঘাঁটি আরও মজবুত করে পরে বড় কিছু ঘটানোর ছক করেছিল। এটা অন্তত এক দশকের পরিকল্পনা। গোয়েন্দাদের মতে, এদের প্রাথমিক লক্ষ্যই হল সীমান্ত অঞ্চলে ভারত-বিরোধী জনভিত্তি বাড়ানো।

গোয়েন্দাদের মতে, কোভিডের পরে দু’-আড়াই বছরে সীমান্ত এলাকায় খারিজি মাদ্রাসা গজানোর প্রবণতা দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে আসা অর্থে অনুমোদনহীন মাদ্রাসাগুলিতে কী পড়ানো হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার কথায়, ‘‘কেবল সীমান্ত এলাকাতেই নয়, মূল ভূখণ্ডেও গরিব মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের মাদ্রাসায় পড়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।’’ খাগড়াগড় কাণ্ডের পরে রাজ্য পুলিশের কাছে এই মাদ্রাসাগুলি নিয়ে প্রশ্ন উস্কে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। যদিও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের দাবি, রাজ্য উপযুক্ত নজরদারি চালাচ্ছে। কাশ্মীরের বাসিন্দা জঙ্গিকেও রাজ্য পুুলিশই গ্রেফতার করিয়ে দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশকেও ছায়াযুদ্ধে ব্যবহারের কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে আইএসআই। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে বাংলাদেশ প্রশাসনে জামায়াতের পাশাপাশি প্রভাব বাড়াচ্ছে হুজি, হিযবুত তাহরীরের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি। আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ মদতে জামায়াতের হস্তক্ষেপে সাধারণ নির্বাচন ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার, দাবি গোয়েন্দাদের। গোয়েন্দারা বলছেন, জামায়াত ভাল করেই জানে, এই মুহূর্তে ভোট হলে তাদের জামানত জব্দ হবে। গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হলেও প্রকাশ্যে এ ভাবে ভারত-বিরোধিতা করা যাবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement