শিশু ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষেই সায় দিল মোদী সরকার। শনিবার এই মর্মে অধ্যাদেশ পাশ হল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। সংসদ বন্ধ। কিন্তু কাঠুয়া-উন্নাওয়ের ঘটনার পরে জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখে ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্যপ্রমাণ আইন এবং শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইন ২০১২ (পকসো) পরিবর্তনের জন্য অধ্যাদেশ আনার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র।
নতুন অধ্যাদেশে সার্বিক ভাবেই ধর্ষণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে রাজ্যগুলির সহযোগিতা নিয়ে ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সময় বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে, ধর্ষণ মামলার তদন্ত শেষ করতে হবে দু’মাসে, শুনানি শেষ করতে হবে দু’মাসে। আপিল মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে ছ’মাসের মধ্যে।
কী পরিবর্তন হল শাস্তিবিধানে? মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনায় ন্যূনতম সাজা ৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর হল। ১২ বছরের কমবয়সি মেয়েকে ধর্ষণ করলে ন্যূনতম সাজা ২০ বছরের জেল, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। ১২ বছরের কমবয়সিকে গণধর্ষণ করলে সাজা যাবজ্জীবন কারাবাস বা মৃত্যুদণ্ড। ১৬ বছরের কমবয়সিদের ধর্ষণ করলেও ন্যূনতম সাজা ১০ বছরের বদলে ২০ বছরের কারাদণ্ড। সর্বোচ্চ শাস্তি আমৃত্যু কারাবাস। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ১৬ বছরের নীচের কাউকে ধর্ষণ বা গণধর্ষণ করলে অভিযুক্তরা আগাম জামিনও পাবেন না। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হবে।
অথচ জানুয়ারি মাসে কিন্তু সামগ্রিক ভাবে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষেই শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি শিশু ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করে আইন আনছিল। এ বার উন্নাও বা কাঠুয়ার ঘটনা নির্ভয়ার স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রও। প্রথমে পকসো আইনে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মেনকা গাঁধী। আজ কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন শেষ করে প্রধানমন্ত্রী দেশে পা দিতেই তড়িঘড়ি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে শাসক শিবির বার্তা দিতে চাইল, যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনা রুখতে মোদী আন্তরিক।
গত কালই সুপ্রিম কোর্টে একটি শিশুধর্ষণের শুনানির সময় অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল জানান, পকসো আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের মতো কড়া বিধান আসছে। সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট এ দিন বলেন, ‘‘আমরা নীতিগত ভাবে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। তবে এখানে পরিস্থিতি ভিন্ন। কিন্তু এমনও নয় যে আইনে মৃত্যুদণ্ড নেই বলেই ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। সরকার আগে ধর্ষণের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা করুক।’’