প্রতীকী ছবি।
গত লোকসভা ভোটে সরকারের কেজো আর গরিব-দরদি মুখ তুলে ধরতে ভরসা ছিল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি, স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের শৌচাগার আর উজ্জ্বলা প্রকল্পে নিখরচার গ্যাস সিলিন্ডার। সূত্রের খবর, তেমনই ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে মাথায় রেখে ‘দেশের সমস্ত গ্রামে প্রতি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়াকে’ পাখির চোখ করছে কেন্দ্র। ওই বছরের মধ্যে সেই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও।
২৩ জুলাই দিল্লি থেকেই ভিডিয়ো-কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মণিপুরের পানীয় জল প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা, ২০২৩ সালের মধ্যে পানীয় জলের কল সেখানকার সমস্ত গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া। এই একই লক্ষ্যে প্রায় প্রত্যেক দিনই কোনও না কোনও রাজ্য কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সঙ্গে কথা বলছে জলশক্তি মন্ত্রক। দ্রুত কাজ এগোলে যেমন প্রশংসা করা হচ্ছে, তেমনই উল্টোটা হলে সটান চিঠি যাচ্ছে সেই রাজ্যের কাছে।
পশ্চিমবঙ্গকেও কিছু দিন আগে এমন চিঠি পাঠিয়েছিল মন্ত্রক। অভিযোগ, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম সংখ্যক কল বসানো হয়েছে। প্রকল্পে বরাদ্দ টাকার মোটা অংশ কেন খরচ করা সম্ভব হয়নি, প্রশ্ন তোলা হয়েছিল তা নিয়েও। রাজ্যের যদিও দাবি, প্রকল্পের কাজ পরিকল্পনা মাফিক এগোনোর চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেনি তারা।
গত বারের ভোট বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছিল, বাড়ি, শৌচাগার, নিখরচার গ্যাস সিলিন্ডারের মতো প্রকল্পের সুফল ভোটবাক্সে দু’হাতে কুড়িয়েছে এনডিএ। সুবিধা পাওয়া অনেক পরিবারের ভোট তো তাদের দিকে ঝুঁকেইছে, পরে একই সুবিধা পাওয়ার আশাতেও ভোট দিয়েছেন প্রতিবেশীদের অনেকে। অনেকের ধারণা, সে কথা মাথায় রেখেই এই পানীয় জল প্রকল্পের কাজে সময় বেঁধে এগোতে চাইছে কেন্দ্র। করোনায় রাজকোষের হাল করুণ হওয়া সত্ত্বেও কার্পণ্য করছে না বরাদ্দে।
প্রকল্প শেষের পরিকল্পনা
• ২০২১ বিহার, গোয়া, পুদুচেরি, তেলঙ্গানা
• ২০২২ উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, মেঘালয়, পঞ্জাব, সিকিম
• ২০২৩ অরুণাচলপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা
• ২০২৪ পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, ঝাড়খণ্ড, কেরল, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, উত্তরাখণ্ড
মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের অগস্টে জল-জীবন মিশন প্রকল্প শুরুর পর থেকে কলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে ৮৫ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারকে। লকডাউন শিথিল হতে শুরু করার পর থেকেই তার সংখ্যা ৫৫ লক্ষ। অর্থাৎ, দিনে গড়ে ১ লক্ষ মতো। দেশের মোট ১৮.৯৩ কোটি গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে ৪.৬ কোটির ঘরে ওই সংযোগ ইতিমধ্যেই রয়েছে। বাকি ১৪.৩৩ কোটি পরিবারের দরজাতেও সময় বেঁধে তা পৌঁছে দিতে চায় মন্ত্রক। এর জন্য ২০২০-২১ সালে ২৩,৫০০ কোটি টাকা কেন্দ্রের তরফে বরাদ্দ করা হয়েছে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে যে অঙ্ক পঞ্চায়েতের মতো গ্রামীণ স্থানীয় প্রশাসনকে দেওয়ার কথা, তারও ৫০% (৩০,৩৭৫ কোটি টাকা) তুলে রাখা হয়েছে পানীয় জল এবং নিকাশি ব্যবস্থার জন্য। এই ‘টানাটানির সংসারেও’ কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি, কাজ এগোলে বাধা হবে না বরাদ্দ।
কার্যত দ্বিতীয় দফার সরকারের প্রথম দিন থেকে ‘সকলের ঘরে পানীয় জল’ আর ‘সকলের মাথায় ছাদকে’ লক্ষ্য হিসেবে নেওয়ার কথা একাধিক বার বলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু করোনার জেরে রাজকোষে যে পরিমাণ টান, তাতে অনেক প্রকল্পেই বরাদ্দ কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সূত্রের খবর, তার মধ্যে বরং তুলনায় কম টাকা ঢেলে এই প্রকল্প রূপায়ণের মাধ্যমে বহু মানুষের জীবন ছোঁয়া সম্ভব বলে সরকারের ধারণা। কারণ ১৫ কোটি গ্রামীণ পরিবারের গড় সদস্য ৪ জন হলেও মোট সংখ্যা ৬০ কোটি!