রওনা উজানি অসমের পথে। রবিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র
নামনি অসমের বিভিন্ন গ্রামে বন্যার জল এখনও নামেনি। অনেকেই এখনও ত্রাণ শিবিরে। অন্য দিকে, সামনেই ইদ। হাতে টাকাও নেই। তারই মধ্যে ঘরে ঘরে নোটিস। লেখা আছে, বংশবৃক্ষে থাকা সবাইকে নিয়ে পরের দিনেই হাজির হতে হবে উজানি অসমের গোলাঘাট, শিবসাগর, লখিমপুর বা যোরহাটের শুনানিতে। দূরত্ব গড়পড়তা ৪০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার!
চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের ২৬ দিন আগে এমন ‘তুঘলকি’ নোটিসে মাথায় হাত পড়েছে কামরূপ, বাক্সা, বরপেটা, গোয়ালপাড়ার তিরিশ হাজার মানুষের। অনেকেই আজ নির্দিষ্ট এনআরসি কেন্দ্রে পৌঁছতেই পারেননি। তাঁদের নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা। কেন হঠাৎ এমন জরুরি তলব, তার কোনও ব্যাখ্যাও দেয়নি এনআরসি দফতর।
গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, সোনতলির বাসিন্দা রেহানা সুলতানা বলেন, ‘‘এক রাতের মধ্যে গোলাঘাট দূরের কথা, চর থেকে শহরে পৌঁছনো সম্ভব নয়।’’ সোনতলি-বকোর মানুষ জানান, সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছিল রি-ভেরিফিকেশন হবে না। তার পর অনেকেই কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছেন।
কামরূপের নগরবেরা থেকে সোনতলি পর্যন্ত ৬টি এনআরসি কেন্দ্রের অধীনে অন্তত চার হাজার পরিবারকে এ ধরনের নোটিস পাঠানো হয়েছে। তীব্র গরমে অনেক গর্ভবতী মহিলা, নবজাতক-সহ মায়েদেরও রাতভর যাত্রা করতে হল। অনেককে একই তারিখে দুই জেলায় শুনানিতে ডাকা হয়েছে। যাঁরা পৌঁছতে পেরেছেন, তাঁদের সমস্ত নথিপত্র, লিগ্যাসি ফের পরীক্ষা করা হয়েছে। অনেককে বলা হয়েছে, তাঁদের লিগ্যাসি বা বংশবৃক্ষ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এআইইউডিএফের মতে, গোটা ঘটনায় ষড়যন্ত্রের আভাস রয়েছে। রাজ্য সরকার বিধানসভায় সংখ্যালঘু এলাকায় এনআরসিতে বেশি নাম ওঠার তথ্য প্রকাশের পরেই তাঁদের নোটিস দেওয়া হল।
বিভিন্ন মহলে অভিযোগ, মানুষকে হয়রানি করতেই এই পথ নিয়েছে এনআরসি কর্তৃপক্ষ। মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস উপদেষ্টা শান্তনু ভরালি বলেন, ‘‘চরম অরাজকতা চলছে। এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা স্বেচ্ছাচার চালাচ্ছেন।’’