—প্রতীকী ছবি।
আপনি লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে নিজের মতামত ফেসবুকে পোস্ট করলেন।
কিংবা রাজ্যের কোনও ঘটনার ভিডিয়ো ইনস্টাগ্রামে দিলেন।
অথবা সাম্প্রতিক যে কোনও ঘটনা নিয়ে আপনার বক্তব্যের ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দিলেন।
এত দিন এতে সরকারের কোনও নজরদারি ছিল না। কিন্তু এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকার নেট দুনিয়ায় কে কী লিখছেন, কী ভিডিয়ো দিচ্ছেন, তাতে নজরদারি করতে চাইছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। গোটা বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্প্রচার পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ বিল। বিল পেশ হওয়ার আগে বিল তৈরির প্রক্রিয়া নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদমাধ্যমের পরে এ বার সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যমেও লাগাম পরাতে চাইছে। তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্র এ বিষয়ে আইন তৈরি নিয়েই মিথ্যে কথা বলছে।
ঘটনা হল, মোদী সরকার ১৯৯৫ সালের কেবল টিভি নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ আইন তুলে দিয়ে নতুন সম্প্রচার পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ বিল আনতে চাইছে। সেই বিলের খসড়া চূড়ান্ত করার কাজও চলছে। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার এত দিন সংবাদমাধ্যমকে চোখ রাঙিয়ে, লাগাম পরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পছন্দ না হলে তা ‘ফেক নিউজ়’ বলে সেই খবর সরানোর ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। কিন্তু অনেক সাংবাদিক এখন নিজের মতো করে ইউটিউব চ্যানেল চালাচ্ছেন। তাঁরা সরকারের ভুলত্রুটি তুলে ধরছেন। নির্বাচনে বিজেপিকে তার খেসারতও দিতে হয়েছে। এখন তাঁদের উপরে সরকারের নজর পড়েছে। নতুন বিল এনে ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে যাঁরা ভিডিয়ো তৈরি করছেন, সেই ইউটিউবার, ইনস্টাগ্রামার, জনপ্রিয় ‘সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার’-দের নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে মোদী সরকার। বিরোধীদের দাবি, আগে আমাজ়ন প্রাইম, নেটফ্লিক্স বা ডিজ়নি হটস্টারের মতো ওটিটি-র ক্ষেত্রে যে ত্রিস্তরীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল, সম্প্রচার বিল পাশ হলে তা ইউটিউবার, ইনস্টাগ্রামারদের ক্ষেত্রেও চালু হবে। ইউটিউবার, ইনস্টাগ্রামারদেরও সরকারি খাতায় নাম লেখাতে হবে।
এখন অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ভিডিয়ো, পডকাস্ট বা লেখালেখির মতো ‘ডিজিটাল কনটেন্ট’ তৈরি করাকেই নিজের পেশা করে নিয়েছেন। সম্প্রচার বিল পাশ হলে তাঁদের কোনও কিছু প্রকাশের আগে সেই ভিডিয়ো বা পডকাস্ট খতিয়ে দেখার জন্য নিজের খরচে কমিটি তৈরি রাখতে হবে। কারা তাঁদের গ্রাহক, সেই তথ্য সরকারকে জানাতে হবে। না হলে আইনি পদক্ষেপের মুখে পড়তে হবে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ, প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকার এই বিল নিয়ে রাজ্যসভায় প্রশ্ন করেছিলেন। তাতে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, বিল নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল, আমজনতা থেকে বিশেষজ্ঞের মতামত জানতে তার খসড়া গত নভেম্বরে জনসমক্ষে আনা হয়েছিল। এখন সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিলের খসড়া তৈরির কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু জহরের অভিযোগ, ‘‘সম্প্রচার বিলের খসড়া বদলে ফেলা হয়েছে। তার পরে তা গোপনে ব্যবসায়ী সংস্থাগুলিকে দেখানো হয়েছে। মোদী সরকার সংসদ থেকে তথ্য গোপন করছে। কিন্তু ব্যবসায়ী সংস্থাকে তথ্য জানাচ্ছে।”
কংগ্রেসের মতে, এই বিলের একমাত্র লক্ষ্য হল নেট দুনিয়ায় সরকারের অত্যধিক নজরদারি। দলের জনসংযোগ দফতরের প্রধান পবন খেরা বলেন, ‘‘সম্প্রচার বিল বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের জন্য বিপজ্জনক। কনটেন্ট ক্রিয়েটর, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের উপরে সরকারি নজরদারি বাড়ানো এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতায় শিকল পরানোর চেষ্টা। কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো আপলোড করলে, পডকাস্ট করলে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে লিখলেই তাঁকে ডিজিটাল সংবাদ সম্প্রচারকারী হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের নিজের খরচে সেন্সর বোর্ড বসাতে হবে। স্বাধীন ভাবে একার উদ্যোগে কাজ করা সাংবাদিকদের এত আর্থিক ক্ষমতা নেই। বিলের খসড়া তৈরির সময় তাঁদের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়নি।”