প্রতীকী ছবি।
বছর দুই আগে সিবিএসইতে ভাল ফল করায় খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন হরিয়ানার এই মেয়ে। ১৯ বছর বয়সি সেই তরুণীকে দিনেদুপুরে বাস স্ট্যান্ড থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল তিন কলেজ পড়ুয়া-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে। হরিয়ানার মহেন্দ্রগড়ের ঘটনা।
বুধবার দুপুরে গ্রামের কাছেই কোচিং ক্লাস থেকে পড়ে বাড়ি ফিরছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীটি। মহেন্দ্রগড়ের কানিনায় বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তরুণীর অভিযোগ, এই সময়ে তিন কলেজ ছাত্র গাড়ি নিয়ে এসে মুখ চেপে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেয়। তার পর ঝাজ্জরের কাছে একটি পরিত্যক্ত চাষের জমিতে নিয়ে গিয়ে আচ্ছন্ন করার কোনও ওষুধ মেশানো পানীয় জোর করে খাওয়ায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ওষুধে অচৈতন্য হয়ে পড়লে শুরু হয় ধর্ষণ। প্রথমে ওই তিন জন। তার পর তাদের সঙ্গে যোগ দেয় চাষের জমিতে আগে থেকে থাকা আরও অনেকে। পরে বিকেল চারটে নাগাদ কানিনার সেই বাস স্ট্যান্ডে তাঁকে ফেলে রেখে যায় ওই তরুণরা। তখনও পুরো জ্ঞান ফেরেনি মেয়েটির। যাওয়ার আগে তরুণীর বাড়িতে ফোন করে তারা জানিয়ে দেয়, বাস স্টপে মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান মা-বাবাই। চিকিৎসকেরা জানান, ধর্ষণ করা হয়েছে মেয়েকে। সঙ্গে সঙ্গে থানায় যান মেয়েটির বাড়ির লোকজন। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, প্রথমে এফআইআর নিতে অস্বীকার করে থানা। এক থানা থেকে অন্য থানা ছোটাছুটির পরে শেষমেশ বাড়ির কাছে রেওয়াড়ী থানায় ‘জ়িরো এফআইআর’ দায়ের করেন মেয়েটির বাড়ির লোকজন। এই ধরনের এফআইআর যে কোনও থানায় দায়ের করা যায়। এর ক্রমিক সংখ্যা হয় শূন্য। যে থানা এলাকায় ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কানিনা থানায় এফআইআরটি পাঠানো হলে তারা জানিয়ে দেয়, ওই বাস স্ট্যান্ড তাদের এলাকায় পড়ে না। পরে অবশ্য তারাই এফআইআর নেয়। কিন্তু এই ঠেলাঠেলিতে এখনও কাউকে ধরা হয়নি। তরুণীর মা সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, এ সবের মাঝে পাড়া থেকে হুমকি আসছে, থানায় গেলে ভাল হবে না। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তিন কলেজ ছাত্রের পরিচয় জানাতে পেরেছেন তরুণী। সকলেই তাঁর গ্রামের। বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। পুলিশকর্তা এ এস চাওলা বলেন, ‘‘ওই তিন জনকে ধরার চেষ্টা চলছে।’’
আরও পড়ুন: মহিলা ভক্ত ও তাঁর নাবালিকা কন্যাকে ধর্ষণ! শ্রীঘরে ‘বাবা আশু মহারাজ’
ধর্ষিতা তরুণীর মায়ের আক্ষেপ, ‘‘সরকার বলে, ‘বেটী বচাও, বেটী পঢ়াও’। মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়ে বড় করার এই পরিণতি! আমার মেয়ে ভয়াবহ মানসিক অবস্থায়। বুধবারের ঘটনা। দু’দিন পরেও ওরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। পুলিশ ধরতেই পারছে না!’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পরীক্ষায় ভাল ফল করার জন্য পুরস্কার পেয়েছে আমার মেয়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, মেয়েদের প়ড়াও। কিন্তু পড়ানোর এই কি ফল!’’
পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের আশ্বাস, ‘‘দোষীরা শাস্তি পাবেই। আইন আইনের পথে চলবে।’’ কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা টুইট করেছেন, ‘‘হরিয়ানার আরও একটি মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হল। বিজেপির ‘বেটী বচাও’ প্রচার সত্যি হচ্ছে হরিয়ানায়।’’