কলকাতার সদ্য-প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে সারদা-রোজ ভ্যালি তদন্তে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলকাতার সদ্য-প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। তাঁর যুক্তি— সরাসরি তাঁর হেফাজতে সারদা-রোজ ভ্যালির তদন্তের সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল না। সে সব ছিল বিভিন্ন তদন্তকারী অফিসারদের হেফাজতে। ভুয়ো অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে গঠিত সিট-এর তদন্তের তিনি দেখভাল করেননি। তিনি শুধু মাত্র প্রশাসনিক সমন্বয়ের কাজ করছিলেন। অন্যান্য অতিরিক্ত কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার ও যুগ্ম-কমিশনাররা সরাসরি তদন্তের দেখভাল করছিলেন।
রাজীব কুমারের এই হলফনামার জবাবে আজ সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই অভিযোগ তুলেছে, উনি ‘মিথ্যে কথা’ বলছেন। এবং তা প্রমাণ করতে পাল্টা হলফনামা দেবে সিবিআই। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, ‘‘সিপি মিথ্যে বলছেন।’’ রাজীব জানিয়েছেন, ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাড়িতে সিবিআইয়ের অভিযানের দিন তিনি লালবাজারে ছিলেন। ২০-২৫ জন সিবিআই অফিসার হাজির হয়ে জানান, তাঁরা ‘সিক্রেট অপারেশন’-এ এসেছেন। রাজীব অফিসে আছেন জানানোর পরেও তাঁরা জোর করে ঢুকতে চান। তাঁদের কাছে কোনও নথি না থাকায় শেক্সপিয়র সরণি থানায় যেতে বলা হয়। সিবিআই অফিসাররা নিজেরাই নিজেদের গাড়িতে চেপে থানায় পৌঁছন। এর পাল্টা যুক্তি হিসেবে, কলকাতা পুলিশের হাতে সিবিআই অফিসারদের হেনস্থা প্রমাণ করতে ছবিও জমা করবে সিবিআই।
সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর বেঞ্চে আজ মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি ও রাজীব কুমারদের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের আদালত অবমাননার মামলার শুনানি হয়নি। অন্যতম বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও নিজেকে শুনানি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কারণ আইনজীবী হিসেবে তিনি এই বিষয়ে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেছিলেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ফের শুনানি হবে। তার আগেই রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে হলফনামার বিরুদ্ধে সিবিআই পাল্টা হলফনামা দেবে। রাজ্যও তার জবাব দিতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘দেশভক্ত’দের বেধড়ক মারে রক্তাক্ত, তবু বাংলা ছাড়বেন না কাশ্মীরের শাল বিক্রেতা জাভেদ
রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের কল ডিটেল রেকর্ডস-এ কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল সিবিআই। রাজীব তাঁর হলফনামায় জানিয়েছেন, সিবিআইকে চারটি সিডি-তে সিবিআইয়ের চাহিদা মতো পাঁচটির মধ্যে চারটি ফোন নম্বরের কল ডিটেলস রেকর্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। আটক হওয়া ৩৬৭টি সামগ্রীর তালিকাও দেওয়া হয়। তাঁর যুক্তি, সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার যাওয়ার পর থেকে এত দিন তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই কোনও অভিযোগ তোলেনি। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, এর আগে অন্তত চার বার তাঁকে ডাকা হলেও রাজীব হাজিরা দেননি।
আরও পড়ুন: দশ মিনিটেই এসে যেত প্রশ্ন, ‘খোকাবাবু’ গ্রুপের ভূমিকা নিয়ে জানাল ধৃত
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুরু হওয়া তদন্তে বাধার জন্য আদালত অবমাননার মামলা করেছিল সিবিআই। একই সঙ্গে সিবিআই রাজীবের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগও আনে। সেই অভিযোগ জোরদার করার জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিয়েছে সিবিআই। তাতে সিবিআই জানিয়েছে, দুর্গাপুরে রোজ ভ্যালির বিরুদ্ধে একটি মামলার কথা সিবিআইকে জানায়নি সিট। মুখ্যসচিব তথা রাজ্য প্রশাসনের কাছ থেকে সমস্ত তথ্য চেয়ে মেলেনি।
আজ রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আপত্তি তুলে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আদালত অবমাননার মামলায় অতিরিক্ত হলফনামা দেওয়া যায় না। তার মধ্যেই সিবিআই নতুন হলফনামা জমা করতে চায়। তবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সিবিআইকে অনুমতি দিয়েছে।