ছুটিতে: সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মা এবং ডেপুটি ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানা। গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।
গত কয়েক দিন ধরে চলতে থাকা লড়াইয়ে বিরতি টানতে শেষ পর্যন্ত ছুটিতে পাঠানো হল সিবিআই প্রধান অলোক বর্মা এবং সিবিআই উপপ্রধান রাকেশ আস্থানাকে। দুই শীর্ষকর্তা ছাড়াও, আরও বেশ কিছু অফিসারকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। অলোক বর্মার অনুপস্থিতিতে অন্তর্বতীকালীন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পেয়েছেন এম নাগেশ্বর রাও। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন নিয়োগ কমিটি মঙ্গলবার গভীর রাতেই জানিয়ে দেয়, ‘‘ নাগেশ্বর রাও এখন থেকে সিবিআই ডিরেক্টরের দায়িত্বভার সামলাবেন।’’
এ ছাড়া গভীর রাতেই ডিরেক্টর অলোক বর্মা এবং ডেপুটি ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার অফিস ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তল্লাশি চালানো হচ্ছে তাঁদের অফিসেও। একই সঙ্গে, যে সব অফিসার এই দুই সিবিআই শীর্ষকর্তার সঙ্গে সরাসরি কাজে যুক্ত, ছুটিতে পাঠানো হয়েছে তাঁদেরও।
জানা গিয়েছে এই দুই শীর্ষকর্তার চলতে থাকা লড়াইতে লাগাম টানতে চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার দু’জনকেই সমস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পরামর্শ দেন। সিবিআই প্রধান ও উপপ্রধানকে ডেকে নিজে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এর পরই জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে দেওয়া হল সিবিআই ডিরেক্টর এবং ডেপুটি ডিরেক্টরকে।
দেশের অন্যতম তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর এই গৃহযুদ্ধের খবর প্রকাশ্যে আনায় দৃশ্যতই বিড়ম্বনায় মোদী সরকার। দেশ জুড়ে সমালোচনার মুখে আজ সরকারের হয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের ভাবমূর্তি রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত। নিরপেক্ষ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুই শীর্ষকর্তাকে ছুটিতেই থাকতে হবে।’’
মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশি মামলার তদন্তকে কেন্দ্র করে প্রায় আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছিল সিবিআই। মঙ্গলবার সিবিআই দফতরে হানা দিয়ে সিবিআই অফিসাররাই আস্থানার ঘনিষ্ঠ অফিসার দেবেন্দ্র কুমারকে গ্রেফতার করেন। আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে আগেই। অলোক তাঁকে সাসপেন্ড করার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই অবস্থায় সম্ভাব্য গ্রেফতারি এড়াতে এ দিন আগাম দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আস্থানা। মঙ্গলবার মধ্যাহ্ন বিরতির পরে বিচারপতি নাজমি ওয়াজিরির বেঞ্চে মামলাটি ওঠে।
আরও পড়ুন: #মিটু: ইন্টারনেটে বিচার নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে, বার্তা রহমানের
আস্থানার আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, আস্থানার বিরুদ্ধে অনৈতিক ভাবে এফআইআর করা হয়েছে। মইন কুরেশি মামলায় যাঁকে (অলোক বর্মা) গ্রেফতার করার জন্য আস্থানা আগে সুপারিশ করেছিলেন, তিনিই এখন অভিযোগকারী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। পাল্টা সওয়ালে সিবিআইয়ের আইনজীবী কে রাঘবচারুলু দাবি করেন, মইন কুরেশির কাছ থেকে দু’কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন আস্থানা। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইন ছাড়াও, ফৌজদারি ষড়যন্ত্র, তোলা আদায়, জালিয়াতির মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। রাঘবচারুলু-ই এর আগে সারদা মামলায় সিবিআইয়ের হয়ে সওয়াল করতেন, যেখানে সারদা তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন আস্থানা।
আরও পড়ুন: রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্তই বাজি পোড়ানো যাবে, রায় সুপ্রিম কোর্টের
দু’পক্ষের শুনানির পরে বিচারপতি সাত দিন স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। ওই সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা যাবে না আস্থানাকে। তবে তদন্ত যেমন চলছে, চলবে। আস্থানাকে তাঁর মোবাইল, ল্যাপটপ এবং অন্য সমস্ত ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে আস্থানা বর্মার বিরুদ্ধে যে পাল্টা অভিযোগ এনেছেন, সে বিষয়ে জবাব চেয়ে সিবিআই প্রধান, সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর ও পার্সোনেল মন্ত্রককে নোটিস পাঠিয়েছে আদালত।
পাতিয়ালা কোর্টের সিবিআই আদালত অবশ্য দেবেন্দ্র কুমারকে এক সপ্তাহের জন্য সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। মইন কুরেশি মামলায় যে এসআইটি গঠন করা হয়, তার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন দেবেন্দ্র। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সানা সতীশ বাবুর বিবৃতি জাল করে মনগড়া তদন্ত রিপোর্ট লেখার অভিযোগ এনেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতকে জানান, সানার বিবৃতির ভিত্তিতেই অলোকের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনেন আস্থানা। দেবেন্দ্র অভিযোগকারীদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে তোলা নিতেন বলেও সিবিআইয়ের দাবি।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)