ভিড় ঠেলে এক অভিযুক্তকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। শনিবার মুম্বইয়ে। ছবি: রয়টার্স।
সর্ষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দুই ‘ভূত’ জালে পড়ল। সঙ্গে আরও এক জন।
আর সেই সঙ্গে উঠে আসছে একের পর এক প্রশ্ন।
প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক প্রতারণা মামলায় আজ পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের দুই অফিসার, গোকুলনাথ শেট্টি ও মনোজ খারাটকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। গোকুলনাথ গত বছরই ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে অবসর নিয়েছেন। গোকুলনাথ ও মনোজের যোগসাজশেই নীরব মোদী ও তাঁর সংস্থা পিএনবি থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা মেটানোর ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি বা ‘লেটার অফ আন্ডারটেকিং’ হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ। এদের সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছেন নীরব মোদীর সংস্থার আধিকারিক হেমন্ত ভাট। সংস্থার হয়ে যাবতীয় সইসাবুদ করার ক্ষমতা দেওয়া ছিল হেমন্তকে। ধৃতদের ৩ মার্চ পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে পাঠিয়েছে বিশেষ সিবিআই আদালত।
দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক প্রতারণা মামলায় প্রথম এই তিন জনকেই গ্রেফতার করা হল। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছেন, নীরব মোদী-মেহুল চোক্সীর মতো রাঘব-বোয়ালরা পগার পার। এখন চুনোপুঁটি জালে উঠছে!
পিএনবি-র ১৮ জন কর্মীকে এখনও পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হয়েছে। পিএনবি প্রথমে ২৯ জানুয়ারি, তার পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি সিবিআইকে প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ করে। সিবিআইকে সব তথ্য একবারে জানানো হয়নি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিয়মিত অডিট সত্ত্বেও কী করে এত দিন গোটা বিষয়টি নজর এড়িয়ে গেল, তা বুঝতে সোমবার পিএনবি-র সিইও-এমডি, অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের তলব করেছে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন। কিন্তু কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ দুর্নীতি দমনে নজরদারিতে ভাল ফল করার জন্য গত অক্টোবরে এই কমিশনই পিএনবি-কে পুরস্কার দিয়েছে!
তদন্তকারীরা বলছেন, পিএনবি-র ডেপুটি ম্যানেজার গোকুলনাথের মাথায় আরও উচ্চপদস্থ কারও হাত ছিল। মুম্বইয়ের ব্র্যাডি হাউস শাখার বিদেশি মুদ্রা শাখায় ২০১০ থেকে কাজ করেছেন গোকুলনাথ। নিয়ম অনুযায়ী, ২০১৫-য় তাঁর বদলি হওয়ার কথা। কিন্তু হননি। ২০১৭-য় মে মাসে অবসর নেন গোকুলনাথ। এই সাত বছরে অন্তত দু’বার ব্র্যাডি হাউস শাখা থেকে গোকুলনাথের অন্যত্র বদলির কথা উঠলেও দু’বারই তা আটকে যায়। প্রশ্ন, এর পিছনে কার হাত ছিল?
তদন্তকারীরা বলছেন, ব্র্যাডি হাউস শাখাতেই ‘সিঙ্গল উইন্ডো অপারেটর’ ছিলেন মনোজ। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত গোকুলনাথ-মনোজ মিলে নীরব-মেহুলের সংস্থাকে বেআইনি ভাবে ‘লেটার অফ আন্ডারটেকিং’ পাইয়ে দিয়েছেন। এক ব্যাঙ্ক থেকে আর এক ব্যাঙ্ককে বার্তা পাঠানোর ‘সুইফ্ট মেসেজিং’ ব্যবস্থাও ব্যবহার করতে পারতেন গোকুলনাথ। ৩৬ বছরের চাকরিতে একবারই পদোন্নতি হয়েছে গোকুলনাথের। ক্লার্ক থেকে ডেপুটি ম্যানেজার হওয়ার পরে ফের পদোন্নতির সুযোগ এলেও তিনি তা নেননি।
সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ জমা পড়তেই বাড়ি থেকে উধাও হন গোকুলনাথ। গত দু’দিন ধরে সিবিআই ও ইডি-র অফিসারেরা মালাডের রুস্তমজি ওজোন কমপ্লেক্সে তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়ে আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। আজ গোকুলনাথকে গ্রেফতার করা হয়।
নীরবের ঘটনায় দেশের আরও ২১টি জায়গায় হানা দিয়ে হীরে, সোনা মিলিয়ে ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করেছে ইডি। শুক্রবার রাতেই নীরব মোদীর সংস্থার দুর্গাপুরের একটি শো-রুম ‘সিল’ করে দিয়েছে ইডি। শনিবার দিনভর সেখানে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছে তারা।