গো-বিধি নিয়ে শীর্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞা

মোদী সরকারের ওই নিয়মের জেরে সাধারণ কৃষক, পশুপালক, মাংস ব্যবসায়ী থেকে মাংস রফতানিতে জড়িত সংস্থা, চর্মশিল্পও মুশকিলে পড়েছিল। এর প্রতিবাদও করেছিলেন তাঁরা। চাপের মুখে আজ সুপ্রিম কোর্টে মোদী সরকারও কিছুটা নরম সুর দেখিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫০
Share:

দেশের হাটেবাজারে কোনও গবাদি পশুই জবাইয়ের উদ্দেশ্যে কেনাবেচা করা যাবে না বলে নিয়ম জারি করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার উপরে আজ সুপ্রিম কোর্ট তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করে দিল। প্রধান বিচারপতি জগদীশ সিংহ খেহর মন্তব্য করেন, মানুষের জীবন ও জীবিকাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলা যাবে না।

Advertisement

মোদী সরকারের ওই নিয়মের জেরে সাধারণ কৃষক, পশুপালক, মাংস ব্যবসায়ী থেকে মাংস রফতানিতে জড়িত সংস্থা, চর্মশিল্পও মুশকিলে পড়েছিল। এর প্রতিবাদও করেছিলেন তাঁরা। চাপের মুখে আজ সুপ্রিম কোর্টে মোদী সরকারও কিছুটা নরম সুর দেখিয়েছে। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পি এস নরসিমহা বলেন, এই নিয়ম নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আসা আপত্তি, মতামত খতিয়ে দেখা হবে। তার পরেই সংশোধিত নিয়মাবলী জারি করা হবে।

গত ২৩ মে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলে, চাষের প্রয়োজন ছাড়া গবাদি পশু বাজার থেকে কেনাবেচা করা যাবে না। গরু, মোষ, উট, ষাঁড়, বলদ বা বাছুর যে কোনও গবাদি পশু কিনতে হলে কৃষক হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে। যিনি বেচছেন, তাঁকেও লিখিত ভাবে জানাতে হবে, জবাইয়ের জন্য পশু বেচা হচ্ছে না।

Advertisement

এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে মাংস রফতানিকারী, চর্মশিল্প ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল, তাদের ব্যবসা ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে পড়বে। কৃষক, পশুপালকদের অভিযোগ ছিল, বাড়িতে বসে গবাদি পশু বেচতে হলে তাঁরা সঠিক দাম পাবেন না। গবাদি পশু নিয়ে মাংস ব্যবসায়ীদের কারখানায় বিক্রি করতে গেলে গো-রক্ষক বাহিনীর হামলার মুখে পড়তে হবে। বস্তুত কেন্দ্র এই বিধি চালু করার আগেই দেশের নানা প্রান্তে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ গো-রক্ষকদের একাধিক হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। তা ছাড়া এই বিধি চালু হলে দুধ দিতে বা চাষের কাজে অক্ষম হয়ে পড়া গরু-মোষকে গরিব চাষি-পশুপালকরা কী ভাবে বসিয়ে খাওয়াবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কৃষক সংগঠনের নেতারা।

পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের মুখ্যমন্ত্রীও এ নিয়ে আপত্তি তোলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পিনারাই বিজয়নদের যুক্তি ছিল, সরকার মানুষের খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তা ছাড়া কেন্দ্রের এ বিষয়ে নিয়ম জারি করার অধিকারই নেই। বিষয়টি পুরোপুরি রাজ্যের এক্তিয়ারে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে বিজেপি তো বটেই তার শরিকরাও এর প্রতিবাদ করে। গো-রক্ষক বাহিনীর একের পর এক হামলা, পেহলু খানের হত্যার মতো ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের এই নিয়মের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রতিবাদের তীব্রতা বাড়ে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে, কেন্দ্র এই সব নিয়ম করে আসলে গো-রক্ষক বাহিনীকেই মদত দিচ্ছে।

গো-বিধি নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রথম মামলা করে সর্বভারতীয় জামিয়াতুল কুরেশ অ্যাকশন কমিটি নামের একটি সংগঠন। প্রশ্ন তোলা হয় মোদী সরকারের জারি করা নিয়মের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে। এর পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার, সিপিএমের কৃষক সভাও মামলায় যোগ দেয়। মাদ্রাজ হাইকোর্ট মে মাসেই কেন্দ্রের ওই নিয়মের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। হাইকোর্টের সেই রায়েরও আজ বিরোধিতা করেনি কেন্দ্র। বস্তুত হাইকোর্টের রায়ই আগামী তিন মাসের জন্য সারা দেশে জারি করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। কেন্দ্রের আইনজীবী এ দিন যুক্তি দেন, রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া এমনিতেও ওই নিয়ম কার্যকর হতো না। আজ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কেন্দ্রের নতুন নিয়ম জারি করার পরে তাতে কারও আপত্তি থাকলে ফের তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানাতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement