বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশে হিন্দুত্ববাদীদের এমন আচরণ নতুন নয়। ফাইল চিত্র।
বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে একটি সরকারি আইন কলেজে চার জন মুসলিম শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘কুশিক্ষা’ দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। সেই অভিযোগ পেয়েই অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ওই চার শিক্ষকের সঙ্গে আরও দু’জন শিক্ষক মিলিয়ে ৬ জনকে সাময়িক ভাবে ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত করল রাজ্যের বিজেপি সরকার। আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন যে নালিশ করেছে, তা খতিয়ে না দেখা পর্যন্ত ওই শিক্ষকদের ক্লাস নিতেও মানা করেছে বিজেপি পরিচালিত রাজ্য সরকারের ওই কলেজের অধ্যক্ষ।
গোটা ঘটনার শেষ এখানেই নয়। ওই আইন কলেজের পাঠ্য হিসেবে বেছে নেওয়া একটি বই, ‘কালেক্টিভ ভায়োলেন্স এন্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম’ (সংগঠিত হিংসা এবং অপরাধের বিচার প্রণালী) নামক একটি বইয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, দুর্গা বাহিনী এবং আরএসএস সম্পর্কে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ থাকায় আরএসএসের ছাত্র সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে ‘বিতর্কিত’ বইটির লেখক ফারহাত খান, প্রকাশক অমর ল’ প্রকাশনী, সংস্থার প্রিন্সিপাল ইনাম উর রহমান এবং শিক্ষক মির্জা মোজিজ বেগের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা প্রভাবশালী বিজেপি নেতা নরোত্তম মিশ্র নিজে বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়ে পুলিশ শীর্ষ কর্তাদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অপরাধমূলক একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বিজেপি শাসিত রাজ্যের পুলিশের এহেন সক্রিয়তায় খুশি সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সামনে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গত ক’দিন ধরে টানা জমায়েত করে ওই শিক্ষকদের কলেজে আসা বন্ধই করে দিয়েছে এবিভিপি। তাদের সমর্থন জোগাতে রাজ্য পুলিশ সেখানে বিরাট বাহিনীও মোতায়েন করেছে।
বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশে হিন্দুত্ববাদীদের এমন আচরণ অবশ্য নতুন নয়। পাড়ায় পাড়ায় চুড়ি বিক্রি করার ‘অপরাধে’ বেশ কয়েক মাস আগে ভোপালে এক মুসলিম চুড়ি বিক্রেতাকে জেলে ভরে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছিল নরোত্তম মিশ্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা পুলিশ। পাশাপাশি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘লাভ জেহাদ’-সহ নানা রকম জেহাদের অভিযোগ এনে গ্রেফতারের মতো ঘটনাও ঘটেছে একাধিক। এ নিয়ে কংগ্রেস-সিপিএমের মতো কয়েকটি বিরোধী দল উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ সরকার তা ঠেকাতে কখনও সক্রিয় হয়নি। অভিযোগ, রাজ্যের বিজেপি সরকারের প্রত্যক্ষ মদতেই উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি এ কাজ করছে।