‘দিল্লি মডেল’কে মমতা অনুসরণ করবেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে। —ফাইল চিত্র।
বিরাট ধাক্কা খেয়েছিলেন ২০১৯-এর ভোটে। কিন্তু, ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগও যেন ক্রমশ বাড়ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে। দিল্লিতে বিপুল পরাজয়ের মুখ দেখল বিজেপি। লোকসভা ভোটের পর থেকে এই নিয়ে তৃতীয় রাজ্যে গেরুয়া রথ মুখ থুবড়ে পড়ল। ২০২১-এর বাংলাতেও কি একই হাল হবে মোদী-শাহের? দিল্লির ভোটে উতরোতে যাঁর পরামর্শে ভরসা রেখেছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল, সেই প্রশান্ত কিশোর (পিকে) মমতারও পরামর্শদাতা। তাই কেজরীবালের জয়ের পরে মমতার রাজ্যের কথাই সর্বাগ্রে চর্চায় আসছে। ‘দিল্লি মডেল’কে মমতা অনুসরণ করবেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লির ভোট থেকে কিছু শিক্ষা মমতা নিতেই পারেন। কিন্তু পরিস্থিতি হুবহু এক নয়। তাই মমতাকে পা ফেলতে হবে সন্তর্পণেই।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে যে সব রাজ্যে ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন মোদী-শাহ, গত আট মাসে সেগুলির বেশ কয়েকটিতে বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গেল। প্রায় কোনওটাতেই আর গেরুয়া ঝড় বইতে দেখা গেল না। হরিয়ানার দখল কোনওক্রমে হাতে থাকলেও, মহারাষ্ট্র হাতছাড়া হয়ে গেল জোটসঙ্গী শিবসেনার বিদ্রোহে। ঝাড়খণ্ডে আরও বড় হার হল। সর্বশেষ ধাক্কাটা দিল দিল্লি।
মহারাষ্ট্র বা ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে কিন্তু দিল্লির পরিস্থিতির ফারাক ছিল। মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল বিজেপি-ই। তাই সেখানে ক্ষমতা-বিরোধিতার হাওয়া ছিল। কিন্তু দিল্লির মসনদ বিজেপির হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ২২ বছর আগে। শেষ দুটো দফায় প্রথমে ৫০ দিন এবং পরে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় ছিল আম আদমি পার্টি (আপ)। অতএব ক্ষমতা-বিরোধিতার হাওয়াও বিজেপি-র বিরুদ্ধে ছিল না। বরং মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধেই সে হাওয়া ওঠার কথা ছিল। কিন্তু, কেজরীবাল বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ফের দিল্লি দখল করলেন।
দিল্লির রাজনৈতিক শিবির বলছে, ভোটপ্রচারে হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়াননি কেজরীবাল। বরং প্রয়োজন মতো নরম হিন্দুত্বের আশ্রয় নিয়েছেন।
দিল্লির মতো বাংলাতেও কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় নেই। দিল্লির মতো বাংলাতেও ২০১৯-এর ভোটে বিপুল সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর মতো বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও বিজেপি-কে রুখতে পিকের পরামর্শ এবং কৌশলের উপরে অনেকটা ভরসা রাখছেন। অতএব দুই রাজ্যের তুলনা আসছেই। কোন কোন মন্ত্রে আস্থা রেখে এ বারের ভোটে সাফল্য পেলেন অরবিন্দ কেজরীবাল? তা নিয়ে বাংলায় জোরদার চর্চা হচ্ছে।
প্রথমেই উঠে আসছে জনলোভা বা জন-প্রিয়তার রাজনীতির কথা। মাসে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ নিখরচায়, দিনে ৭০০ লিটার পর্যন্ত জল নিখরচায়, সরকারের তৈরি ‘মহল্লা ক্লিনিকে’ চিকিৎসা এবং ওষুধ নিখরচায়, সরকারি বাসে মহিলাদের যাতায়াত নিখরচায়— কেজরীবালের এই সব প্রকল্পকে ‘পপুলিস্ট’ বা জন-প্রিয় প্রকল্প আখ্যা দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
এই ধরনের প্রকল্প কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেননি? অবশ্যই করেছেন। স্কুলে পড়ুয়াদের বই-খাতা-জুতো দেওয়া, সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেল দেওয়া, কন্যাশ্রী-রূপশ্রী প্রকল্পে ছাত্রীদের ঘরে ঘরে মোটা অঙ্কের টাকা পৌঁছে দেওয়া, হাজার হাজার ক্লাবে বছর বছর মোটা অঙ্কের আর্থিক অনুদান দেওয়া— জন-প্রিয়তামুখী একগুচ্ছ পদক্ষেপ মমতাও করেছেন। এ ছাড়া বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়া, ১০০ দিনের কাজ দেওয়া, সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা, ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া-সহ নানা উপায়ে অনেককেই কিছু না কিছু পাইয়ে দেওয়া নিরন্তর চলছে।
সিএএ-বিরোধী প্রচারে গোটা বাংলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মমতা। দিল্লিতে কেজরীবালকে কিন্তু এই ভূমিকায় দেখা যায়নি।
তা হলে কি কেজরীবালের মতো মমতারও উচিত ওই জন-প্রিয় পদক্ষেপগুলোকে সামনে রেখে ভোটে যাওয়া? দিল্লি মডেলকে হুবহু অনুসরণ করতে হলে তেমনই করা উচিত। কিন্তু সে কৌশল খুব একটা ফলপ্রসূ হবে বলে বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন না।
কারণ মূলত দুটো।
প্রথমত, এই পাইয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে সরকারের জন-প্রিয় ভাবমূর্তি তৈরি করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক দিন ধরেই সচেষ্ট। প্রকল্পগুলো অনেক দিন ধরে চলছে। তা সত্ত্বেও ২০১৯-এর ভোটে বিজেপির কাছে বড় ধাক্কা খেল তৃণমূল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা— সরকারের কাছ থেকে পেতে যাঁরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তাঁরা হয়তো এখন আরও বেশি পেতে চাইছেন।
দ্বিতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রেই এই সব প্রকল্পগুলির রূপায়ণে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে গিয়ে কিছু দিতে হয়েছে। নাগরিককে সরকারি সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টাকার অঙ্কে ভাগ বসিয়েছেন তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। তা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের আঁচ বিস্তর।
দিল্লি বিধানসভার এ বারের নির্বাচনে ‘উন্নয়ন’কেও বড় ইস্যু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। বিজেপির অভিযোগ ছিল— উন্নয়ন কিছুই নেই, সবই ‘ফ্রি’-এর চক্কর। কিন্তু, দিল্লির সরকারি স্কুলগুলোর চেহারা যে অনেকটা বদলে দিয়েছেন কেজরীবাল, সে ছবি গত কয়েক মাসে নানা ভাবে সামনে উঠে এসেছে। স্কুলের পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো, নামী বেসরকারি স্কুলের মতো ডিজিটাল সুবিধাযুক্ত ক্লাসরুম, পঠন-পাঠনের আধুনিকীকরণ— অনেক উল্লেখযোগ্যও কাজই কেজরীর সরকার করেছে শিক্ষাক্ষেত্রে। আধুনিক পঠন-পাঠনের অভিজ্ঞতা দিতে দিল্লির সরকারি স্কুলগুলির শিক্ষকদের নরওয়ে, ফিনল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশে সফরও করানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও ভাল কাজ হয়েছে বলে কেজরীবাল বার বার দাবি করেছেন। শুধু বিনামূল্যে চিকিৎসা নয়, স্বাস্থ্য পরিষেবার মান এবং সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোও কেজরীবাল অনেক উন্নত করেছেন বলে আপের দাবি।
বিজেপি-কে রুখতে বাংলাতেও কি তা হলে কেজরীবালের মতোই ‘উন্নয়ন’-এর ছবিকে সামনে নিয়ে আসা উচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা অধ্যাপক শিবাজীপ্রতিম বসুর কথায়, ‘‘অরবিন্দ কেজরীবালরা কিন্তু মোটের উপর দুর্নীতি থেকে দূরে থেকেই উন্নয়নের কাজটা করেছেন। ভোটের প্রচারে কেজরীবাল সে কথা জোর দিয়ে বার বার বলেওছেন। বিজেপি এবং কংগ্রেস সে দাবিকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে ঠিকই। কিন্তু তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে কেউই দেখাতে পারেননি যে, কেজরীবালের সরকার বিরাট মাপের কোনও দুর্নীতিতে যুক্ত থেকেছে।’’
বিজেপি-কে রুখতে বাংলাতেও কি তা হলে একই ভাবে ‘উন্নয়ন’-এর ছবিকে সামনে নিয়ে আসা উচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের? তাতে কি বিজেপির মেরুকরণের চেষ্টাকে ভেস্তে দেওয়া যাবে?
এখানেই পাল্টা প্রশ্ন উঠছে যে, কোনও ‘উন্নয়ন’-এর ছবি সামনে আনতে পারবে কি তৃণমূল? মূলত উন্নয়নের ইস্যুর উপরে দাঁড়িয়ে কি তারা ভোটে লড়তে পারবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘শুধুমাত্র উন্নয়ন ইস্যুতে কিছুতেই ভোটে যেতে পারবে না তৃণমূল। তাতে হিতে বিপরীত হবে।’’ কেন তা হবে? অধ্যাপক চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে উন্নয়ন এবং দুর্নীতি হাত ধরাধরি করে চলে। তথাকথিত উন্নয়ন যত হয়েছে বা হচ্ছে, তৃণমূলের ততই ভোট কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। ধরুন, এক জনকে সরকারি আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়া হল। তাঁর প্রাপ্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু, তিনি হাতে পাচ্ছেন ৭০ হাজার টাকা। এতে প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। তৃণমূল নেতারা হয়তো ভাবছেন, এক জনকে বাড়ি পাইয়ে দিলাম। কিন্তু যিনি বাড়ি পাচ্ছেন, তিনি দেখছেন যে, সরকার তাঁর জন্য যে টাকা ধার্য করে রেখেছে, তৃণমূল নেতারা তার বিরাট অংশ খেয়ে নিচ্ছেন। তিনি তো ক্ষেপছেনই, আশপাশের আর পাঁচটা লোকও এ সব কথা জেনে ক্ষেপে যাচ্ছেন।’’
দুর্নীতির প্রশ্ন বাদ রেখেও যদি দেখা হয়, তা হলেও দিল্লিতে যতটা উন্নয়ন হয়েছে, বাংলায় ততটা হয়নি বলেই বিশ্লেষকদের মত। অধ্যাপক শিবাজীপ্রতিম বসুর মতে, ‘‘মনে রাখতে হবে, দিল্লির উন্নয়নের মডেল হল শহরভিত্তিক উন্নয়নের মডেল। দিল্লির প্রায় পুরোটাই ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা। এক একটা মহল্লায় হয়তো ৩০-৪০ হাজার লোকের বাস। এ বার সেখানে গোটা দুয়েক মহল্লা ক্লিনিক খুলে দিলেই বিরাট সংখ্যক মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বিরাট রাজ্য। কলকাতা শহরে হয়তো ওই মহল্লা ক্লিনিকের মডেল কাজ দিতে পারে। কিন্তু বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে, যেখানে জনঘনত্ব খুব কম, সেখানে ৩০-৪০ হাজার লোককে পরিষেবা দিতে হলে দুটো মহল্লা ক্লিনিক খুললে চলবে না। কারণ ৩০-৪০ হাজার লোক সেখানে বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকেন। তাঁদের সবার বাড়ির কাছাকাছিই মহল্লা ক্লিনিক থাকবে, এমনটা ভাবতে হল সরকারকে হয়তো ২টোর জায়গায় ১০-১২টা ক্লিনিক খুলতে হবে।’’
আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা প্রশাসনিক ব্যর্থতার যে কোনও অভিযোগকে কেন্দ্রের দিকে ঠেলে দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারবেন না। যেটা কেজরীবাল পেরেছেন।
জনসংখ্যার চরিত্র এবং জনবিন্যাসের ক্ষেত্রে দিল্লির সঙ্গে বাংলার ফারাক যে বিস্তর, সে বিষয়ে অন্য বিশ্লেষকরাও একমত। অতএব অরবিন্দ কেজরীবাল যে ভাবে সিএএ-এনআরসি ইস্যু প্রায় পুরোপুরি ভুলে গিয়ে শুধু উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র থেকে বিহার— কোথাওই মুখ্যমন্ত্রীদের পক্ষে তেমনটা সম্ভব হবে না বলেই বিশ্লেষকদের মত।
ক্ষমতা-বিরোধিতা বা ‘অ্যান্টি ইনকামবেন্সি’র হাওয়াও কিন্তু বড় হয়ে উঠবে বাংলার ভোটে। কেজরীবালের হাতে পুলিশ নেই, প্রশাসনের অনেকটাই নেই। আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনও সমস্যার দায় তাঁর ঘাড়ে চাপেনি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পূর্ণাঙ্গ রাজ্য। পুলিশ এবং পুরো প্রশাসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা প্রশাসনিক ব্যর্থতার যে কোনও অভিযোগকে কেন্দ্রের দিকে ঠেলে দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারবেন না। যেটা কেজরীবাল পেরেছেন।
তবে কেজরীবাল নিজের বিরুদ্ধে কেন ঠেকাতে পেরেছেন ক্ষমতা-বিরোধিতার হাওয়া, তা নিয়ে অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর মত অন্য রকম। তিনি বলছেন, ‘‘দিল্লিতে উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্রের সঙ্গে আপোস করে হয়নি। বাংলায় যাবতীয় উন্নয়ন গণতন্ত্রের সঙ্গে আপোসে গিয়ে। দিল্লিতে সরকার নাগরিকের পাশে দাঁড়িয়েছে নাগরিকের সম্মান রক্ষা করে। বাংলায় নাগরিকের প্রশ্নহীন আনুগত্যের বিনিময়ে তাঁকে কিছু দেওয়া হয়েছে। লোকসভা নির্বাচন বা পুরসভা, নাগরিককে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি, ভয় দেখানো হয়েছে, ভোট লুঠ হয়েছে— এমন অভিযোগ কোনও দল কি অন্য কোনও দলের বিরুদ্ধে তুলতে পারবে? পারবে না। পশ্চিমবঙ্গে ভোট লুঠটাই যেন স্বাভাবিক ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব এখানে শাসকের বিরুদ্ধে ক্ষমতা বিরোধিতার হাওয়া থাকবেই।’’
বিশ্লেষকদের মতে, ‘‘উন্নয়ন এবং স্বচ্ছ প্রশাসন— কেজরীবালের মতো এই দুই ইস্যুকে সামনে রেখে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটে লড়তে পারতেন, তা হলে তার চেয়ে ভাল আর কী-ই বা হতে পারত। কিন্তু তিনি সে পথ নিতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, সিএএ-এনআরসি ইস্যুতেও কেজরীর পথ মমতা কিছুতেই ধরবেন না।’’
কেন ধরবেন না? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা— সিএএ পাশ হওয়ার পরে আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি তৈরি হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যেই। দিল্লিতে সংখ্যালঘু ভোটের পরিমাণ যতটা, বাংলায় তার চেয়ে অনেক বেশি। দিল্লিতে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু ভোটারদের পাশে পেলে ভোটে জিতে আসা যায় না। সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশের ভোটও তার সঙ্গে পাওয়ার দরকার হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটারদের সিংহ ভাগকে পাশে পায় যে দল, সে দল ভোটের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে বেশ খানিকটা পিছনে ফেলে রেখেই দৌড় শুরু করে। কারণ ওই বিরাট ভোটব্যাঙ্ককে পাশে পাওয়ার পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের কিছুটা অংশের সমর্থন পেলেই সরকার গড়ার পাটিগণিত তৈরি হয়ে যায়।
২০০৯ সাল থেকেই বাংলায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে হেলে রয়েছে। যত দিন গিয়েছে, ততই মমতার সেই ভোটব্যাঙ্ক আরও সংহত হয়েছে। সুতরাং সিএএর বিরোধিতায় যে রুদ্রমূর্তি মমতা ধরেছেন, তা বহাল রাখাই যে সবচেয়ে লাভজনক কৌশল, তা বাংলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিএএ-এআরসির তীব্র বিরোধিতাই হল এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকা সবচেয়ে বড় অস্ত্র, যা দিয়ে ক্ষমতা বিরোধিতার হাওয়াকে আটকানো যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের উপরে দাঁড়িয়ে মমতা এখন শাসকের ভাবমূর্তি থেকে বেরিয়ে এসে ফের বিরোধী নেত্রী হয়ে উঠতে চাইছেন। যদি সফল হন সে কাজে, তা হলে ২০২১-এর পরে মমতাকে দেখেও আবার অনেকে শিক্ষা নেবেন।
ছবি: পিটিআই এবং এএফপি।