নিশিদিন মোদীর নজর, মন্ত্রীরা তটস্থ

বড় এক শিল্পপতির সঙ্গে সবে বসেছেন দিল্লির একটি পাঁচতারা হোটেলে। দুপুরের খাওয়া ও আড্ডার ফাঁকে একটু কাজের কথা সেরে নেওয়া। এই ছিল মন্ত্রীমশাইয়ের ভাবনা। হঠাৎই ফোন। ও পারে খোদ প্রধানমন্ত্রী, “খাওয়া শেষ হল?” একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে তড়িঘড়ি খাবারের পাট চুকিয়ে দফতরে ছুটলেন মন্ত্রী। বুঝলেন, পাঁচতারা হোটেলে একান্তে শিল্পপতির সঙ্গে বৈঠকটি ভাল চোখে দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৯
Share:

বড় এক শিল্পপতির সঙ্গে সবে বসেছেন দিল্লির একটি পাঁচতারা হোটেলে। দুপুরের খাওয়া ও আড্ডার ফাঁকে একটু কাজের কথা সেরে নেওয়া। এই ছিল মন্ত্রীমশাইয়ের ভাবনা। হঠাৎই ফোন। ও পারে খোদ প্রধানমন্ত্রী, “খাওয়া শেষ হল?”

Advertisement

একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে তড়িঘড়ি খাবারের পাট চুকিয়ে দফতরে ছুটলেন মন্ত্রী। বুঝলেন, পাঁচতারা হোটেলে একান্তে শিল্পপতির সঙ্গে বৈঠকটি ভাল চোখে দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী।

আরও মাস খানেক আগের কথা। মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর প্রথম বিদেশ যাচ্ছেন নতুন সরকারের আমলে। বিদেশ সফর, একটু ভোলবদল করাই যায়! পাজামা-কুর্তা ছেড়ে জাভড়েকর জিন্স পরে সবে বেরিয়েছেন বাড়ি থেকে। বিমানবন্দরের দিকে। ফোন। সেই নরেন্দ্র মোদী। উপদেশ, বিদেশ গেলেও পোশাকের দিকে নজর দেওয়া উচিত। ড্রাইভারকে গাড়ি ঘোরাতে বললেন মন্ত্রী। বাড়িতে গিয়ে কুর্তা-পাজামা পরে ফের গেলেন বিমানবন্দরে।

Advertisement

স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার মঞ্চ থেকেই মোদী বলেছিলেন, এই সরকারে আরও কয়েক ডজন সরকার রয়েছে। মোদীর সেই তির্যক মন্তব্য ছিল সরকারের ভিতরে থাকা কিছু কায়েমি স্বার্থের কেন্দ্র ও ‘পাওয়ার ব্রোকার’দের উদ্দেশে। গোড়া থেকেই সেই শক্তিকে তছনছ করে গোটা

রাশ নিজের হাতে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে কোনও ভাবেই কোনও মন্ত্রী বা আমলা এদের খপ্পড়ে না পড়েন। ভোট প্রচারে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রচার করেই ক্ষমতায় এসেছেন তিনি।

এ বারে প্রশাসনকে ক্ষিপ্র ও দুর্নীতিমুক্ত করে তুলতে তিনি মন্ত্রীদের যাবতীয় গতিবিধির উপরেও কড়া নজর রাখছেন। প্রয়োজনে সেটি জানিয়েও দিচ্ছেন তাঁদের। করছেন সতর্কও।

মন্ত্রীদের উপর নজর রাখার রেওয়াজ আজকের নয়। ইন্দিরা গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জৈল সিংহের উপর নজর রাখার জন্য গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। জৈল সিংহ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে গোটা রাষ্ট্রপতি ভবনে আড়ি পাতার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজীব গাঁধী। সঞ্জয়-জায়া মেনকা গাঁধীর উপরেও নজর রেখেছিলেন ইন্দিরা।

হালে গত ইউপিএ জমানায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর দফতরে আড়ি পাতা হয়েছে। সন্দেহের তির ছিল সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দিকে। ইউপিএ জমানাতেই রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল। তবে এখন নতুন জমানায় মন্ত্রীরা এটা বলছেন না যে, তাঁদের উপর গোয়েন্দাদের নজর রয়েছে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী যে বিভিন্ন সূত্র থেকে তাঁদের গতিবিধির হদিস পান, সেটি বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তাঁরা। তা না হলে পাঁচতারা হোটেলে খেতে বসলে বা বাড়ি থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলেই কী করে খবর পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী?

লোকসভার প্রচারে তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও মোদী বারবার বলেছেন, তাঁর আমলে দুর্নীতির কোনও জায়গা নেই। “না আমি খাব, না কাউকে খেতে দেব। আমার আগেও কেউ নেই, পিছনেও কেউ নেই,” এই স্লোগান তিনি বারবারই উচ্চারণ করেন প্রকাশ্য সভায়। প্রতিটি মন্ত্রীকেও পইপই করে এ কথা বলেছেন তিনি। সে কারণে নেতাদের ছেলেদের বিরুদ্ধেও কোনও অভিযোগ এলে তিনি নিজে ডেকে সতর্ক করেন।

বিজেপির এক সূত্রের দাবি, সম্প্রতি রাজনাথ সিংহের ছেলে পঙ্কজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বিস্তর হইচই হয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে রাজনাথ সিংহ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু শুধু পঙ্কজই নন, শরিক দলের নেতা রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগের বিরুদ্ধেও কিছু অভিযোগ কানে আসায় মোদী তাঁকে সতর্ক করেছেন।

সরকারি সূত্রের খবর, প্রশাসনকে আরও দুর্নীতিমুক্ত করতে তিনি এ বারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলিতে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন লাগানোরও নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে যে সব মন্ত্রকে দুর্নীতির সুযোগ বেশি, সেখানে কে কে আসছেন, কার সঙ্গে দেখা করছেন; সেই সবই রেকর্ডে রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী। যাতে মন্ত্রী ও আমলারাও সতর্ক থাকেন।

মোদী মন্ত্রিসভার এক সদস্যের কথায়, “যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী সকলের উপরে নজরদারি করছেন, তাতে অনেকেই তটস্থ।” এ কথাও তিনি জানালেন যে, মন্ত্রীরা অনেকেই এখন আর ব্যক্তিগত কথা বলার জন্য নিজেদের ফোনও ব্যবহার করেন না। পরিবারের কোনও সদস্য বা নিদেনপক্ষে ড্রাইভারদের ফোন নিয়ে কথা বলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement