ওঁরা ভারতের কথা শুনতে বলছেন

ইরফান হাবিবের মতে, “এই বিক্ষোভকে শুধু মুসলিমদের ক্ষোভ হিসেবে দেখলে ভুল হবে।”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৬
Share:

হর্ষ ভোগলে ও ইরফান হাবিব

দু’জনেই বলছেন, ঠিক সুরটি চিনে নিতে। এক জন ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার। অন্য জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইতিহাসবিদ। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে দেশজোড়া প্রতিবাদের আবহে ফেসবুকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হর্ষ ভোগলের আক্ষেপ, ‘‘বিভেদগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে আমরা সঙ্কীর্ণ করে তুলছি আমাদের দেশকেই। নতুন ভারত বলছে, তারা এতে খুশি নয়।’’ আর অশীতিপর ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের মতে, এই বিক্ষোভকে শুধু মুসলিমদের ক্ষোভ হিসেবে দেখলে ভুল হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এই প্রতিবাদ ভারতের জন্য। গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য।’’

Advertisement

হর্ষও তা-ই বলছেন। তিনি মনে করছেন, ‘‘নতুন ভারত আমাদের সঙ্গে কথা বলছে। বলছে তারা কী হয়ে উঠতে চায়। বলছে, আমরা যেমন বলে দিচ্ছি, তেমন হবে না তারা।’’ দীর্ঘ পোস্টে সরকারকে তার বুনিয়াদি কয়েকটি দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন হর্ষ। তাঁর মতে, এই তো সময়, যখন একটি হিতৈষী সরকার ভাববে শিক্ষা, পরিকাঠামো, প্রযুক্তির কথা। সরকারই উদার হয়ে বর্তমান প্রজন্মকে সব বাধা থেকে
মুক্ত করবে, যাতে তারা দেশকে অভাবনীয় উচ্চতায় নিয়ে যায়। প্রশ্ন হল, তা হলে এত ভয় তৈরি করা হচ্ছে কেন? কেন বাধা তৈরি করা হচ্ছে সমাজের পথে? কেন উড়তে বাধা পাচ্ছে নতুন প্রজন্ম?

নাম না-করে পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত করে হর্ষ লিখেছেন, ‘‘আমরা কেন আমাদের প্রতিবেশীদের পিছনে লেগে রয়েছি, যখন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে তারা আমাদের ধারে-কাছে আসে না?’’

Advertisement

২০১৯-এর নির্বাচনে আগের চেয়েও বেশি আসনে জিতে আসার কথা ফলাও করে বলে থাকেন নরেন্দ্র মোদীরা। সংসদে বিল পেশের সময়েও প্রসঙ্গ ওঠে সংখ্যার ‘দম্ভের’। হর্ষের মতে, ভোটে জিতে আসাটা কখনও বিভেদ উস্কে দেওয়ার কারণ হতে পারে না। বরং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার উদারনীতি আরও অনেক ভোটে জয়ের পথ খুলে দেয়। ক্রিকেটের উপমা দিয়েই তিনি বলছেন, গত আড়াই দশক ধরে ভারতের ইনিংসটা ভালই গিয়েছে। কাজেই যুদ্ধ আর সাংস্কৃতিক ভেদাভেদের বুলি দিয়ে আগামী প্রজন্মকে ভারাক্রান্ত করে তোলা নিষ্প্রয়োজন।

ইরফান হাবিবের মতে, পাকিস্তানের শাসক শ্রেণির মতো ভারতের শাসকেরাও জানেন যে, ধর্ম দিয়ে জনতার আবেগকে উস্কে দেওয়া যায়। বর্তমান সরকারের প্রশাসনিক পদক্ষেপে হিন্দু রাষ্ট্রের কর্মসূচি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কিন্তু প্রতিবাদে হিন্দুরা-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দিয়েছেন। নাগরিকত্ব আইনের প্রভাব সকলের উপরেই পড়বে। আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের ধারণায় তা আঘাত করবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভকারীদের উপরে পুলিশ যে ভাবে চড়াও হয়েছে, ঔপনিবেশিক আমলেও তা দেখা যায়নি বলে হাবিবের মত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement