স্ত্রীর দেহের পাশে রামসিংহ ও তাঁর মা।
অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তার ধারে পড়ে আছে এক মহিলার দেহ। আর তার পাশেই এক ব্যক্তি এবং এক বৃদ্ধা অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। রাস্তা দিয়ে যে সব গাড়ি যাচ্ছিল দাঁড়ানোর জন্য তাদের কাছে কাতর ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছিলেন একটু সাহায্যের জন্য। কিন্তু কেউ ফিরেও তাকাচ্ছিল না। এ দিকে ওই ব্যক্তির কোলে তখন সদ্যোজাত শিশুটি বিরামহীন ভাবে কেঁদে যাচ্ছিল। এই দৃশ্য ধরা পড়ে মধ্যপ্রদেশের দামোতে।
কিছু দিন আগেই এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন ওই মহিলা। তার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মা ও তাঁর শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীর চিকিত্সা করাতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বাসে করে শহরে যাচ্ছিলেন রাম সিংহ। পথের মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রাম সিংহের স্ত্রী। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। বাস কন্ডাক্টর বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তিনি চালককে ঘটনাটি জানান। এর পরেই চালক বাস থামিয়ে জোর করে স্ত্রীর দেহ সমেত রামসিংহকে রাস্তার এক জনশূন্য জায়গায় নামিয়ে দেন। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে পড়ে কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। সাহায্যের জন্য বার বার রাস্তায় ছুটে যাচ্ছিলেন শিশুটিকে কোলে নিয়ে। রাস্তা দিয়ে একের পর এক গাড়ি যাচ্ছিল, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। অবশেষে এক আইনজীবী বাইকে করে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রামসিংহকে লক্ষ্য করেন। গাড়ি থামিয়ে তিনি পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানান। কিন্তু এখানেও যে টানাপড়েন চলবে সেটা ভাবতে পারেননি রামসিংহ। পুলিশ সাফ জানিয়ে দেয় ওই এলাকা তাদের নয়, ফলে তারা কিছু করতে পারবে না। তখন ওই আইনজীবী নিজের উদ্যোগে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন। ওই অ্যাম্বুল্যান্সে করেই স্ত্রীর দেহ নিয়ে নিজের গ্রামের দিকে রওনা দেন রামসিংহ।
এ রকম অমানবিক কাজ কী ভাবে করতে পারলেন? বাসচালককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “যাত্রীরা আপত্তি করছিলেন। তাই বাধ্য হয়েই আমি ওদের নামিয়ে দিয়েছি।”
কালাহান্ডি, বালেশ্বরের পর জব্বলপুরের দামোর এই অমানবিক এই দৃশ্য বার বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আমরা নিজেদের সভ্য বলে বড়াই করলেও আসলে তা অন্তঃসারশূন্য।
আরও খবর...
পা দিয়ে বৃদ্ধার দেহ ভেঙে ঠেসেঠুসে প্লাস্টিকের ব্যাগে ঢোকালেন স্বাস্থ্যকর্মীরা!