২০ পাতার বাজেট-বক্তৃতা বিরোধীদের পড়ার সময় না দিয়েই পাশ করিয়ে নিলেন শিলচরের পুরপ্রধান নীহারেন্দ্রনারায়ণ ঠাকুর!
কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধিরা এক দিন সময় চেয়েছিলেন। রাজি হননি নীহারেন্দ্রবাবু। তাঁর যুক্তি— রাজ্য সরকারের কাছে ২৮ ফেব্রুয়ারি বাজেটের প্রতিলিপি পাঠানোর সময়সীমা ছিল। তৎকালীন কার্যবাহী আধিকারিক তা করেননি। পরে রাজ্য সরকার ২৮ এপ্রিলের মধ্যে ওই প্রতিলিপি পাঠাতে বলে। তাই বিরোধীদের দাবি মেনে এক দিন সময় দেওয়াও সম্ভব নয়।
প্রতিবাদে আজ কংগ্রেস সদস্যরা পুরসভা থেকে ‘ওয়াকআউট’ করেন। ২৮ সদস্যের পুরসভায় বিজেপির শক্তি ১৭। শাসক দলের সবাই উপস্থিত ছিলেন বলে বাজেট পাশ করাতে সমস্যা হয়নি। শিলচর পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারের কাছে ৩৭ কোটি ৪৭ লক্ষ ৬২ হাজার ২৭১ টাকা চাওয়া হয়েছে।
বাজেট অধিবেশনের শুরুতে কংগ্রেসের তমালকান্তি বণিকের শপথগ্রহণ নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। কংগ্রেস প্রতিনিধিরা শপথগ্রহণ-পর্ব দিয়েই সভার কাজ শুরু করার আর্জি জানান। পুরপ্রধান নীহারেন্দ্রবাবু সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘বাজেট পাশের জন্য এটি জরুরি বৈঠক। একটাই আলোচ্যসূচি। আজ অন্য কিছু হবে না। পরের সভায় তমালবাবু শপথ নেবেন।’’ শপথের আগে আলোচনায় অংশ নেবেন না বলে তমালবাবু সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
পুরপ্রধান তখন বাজেট পাশ করাতে তৎপর হন। বিরোধী সদস্যরা আপত্তি তোলেন। বিরোধী দলনেতা অলক কর বলেন, ‘‘নিয়মের তোয়াক্কা না করে অধিবেশন ডাকা হয়েছে। ৭ দিন সময় দিয়ে পুরসভার সভা ডাকা হয়। বাজেট নিয়ে আলোচনা থাকলে তার প্রতিলিপি সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়। প্রস্তুতি নিয়ে সভায় আসেন সদস্যরা। এ ভাবে হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বাজেট পাশ করানো যায় না।’’ কংগ্রেস সদস্যরা অন্তত এক দিন সময় চান। গত কাল রাজ্য সরকারের কাছে বাজেট জমা দেওয়ার শেষ দিন হলে, আগে কেন পুরসভার অধিবেশন ডাকা হল না— সেই কৈফিয়তও তাঁরা দাবি করেন।
নীহারেন্দ্রবাবু জানান, পুরসভার বাজেট তৈরিতে অন্তত ৩ মাস সময় লাগে। তিনি ২ এপ্রিল সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। দিন রাত তাঁকে বাজেট তৈরি করতে হয়েছে। গত রাতে সমস্ত কাজ শেষ করেছেন। ফলে আগে এই অধিবেশন ডাকার সুযোগ ছিল না। আর সময়ও দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর কথা শুনেই কংগ্রেস জনপ্রতিনিধিরা ‘ওয়াকআউট’ করেন। বিজেপি সদস্যরা টেবিল চাপড়ে কোনও সংশোধন-সংযোজন ছাড়াই বাজেট পাশ করিয়ে নেন। তিন নির্দল সদস্যের মধ্যে মনজুর আহমদ অনুপস্থিত ছিলেন। বীরব্রত রায় এবং অসিত সরকার বাজেট নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
সভার শেষে প্রাক্তন পুরপ্রধান তমালবাবু বলেন, ‘‘২ এপ্রিল জেলাশাসককে জানিয়েই শহরের বাইরে গিয়েছিলাম। তাই শপথ নিতে পারিনি। ১৮ এপ্রিল ফিরে পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে শপথ গ্রহণের ইচ্ছে প্রকাশ করি। কিন্তু তিনি কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ দিন সভা থাকলেও তিনি শপথ করাতে রাজি হননি।’’ তমালবাবু কংগ্রেস পুর-পরিষদীয় দলের সভাপতিও। নীহারবাবুর বাজেট পেশের প্রক্রিয়ায় ক্ষোভ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান পুরপ্রধান বিরোধী দলের সদস্যদের কোনও কথাই শুনতে চান না। এটি অগণতান্ত্রিক।’’
নীহারেন্দ্রবাবু অবশ্য কংগ্রেস সদস্যদের সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়াকে ‘ওয়াকআউট’ বলে মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা সভায় ঢুকলেন আর বেরিয়ে গেলেন। সইও করলেন না। সই করলই কাগজপত্রে উপস্থিতির প্রমাণ দেয়। কেউ উপস্থিত না-থাকলে ওয়াকআউট করবেন কী করে!’’ তিনি জানান, বাজেটে জঞ্জাল নিষ্কাশন, রাস্তাঘাট মেরামত ও সংস্কার এবং পানীয় জল সরবরাহে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফুটপাত ও পুরসভার জমি দখল মুক্ত করতে তিনি তৎপরতার কথা শোনান।
বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি ও পুরসদস্য রাজেশ দাস জানান, বিরোধী সদস্য হলেও প্রাক্তন পুরপ্রধানকে তাঁরা মর্যাদা দিতেই চান। ২ এপ্রিলের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পদাধিকারবলে পুরসভার সদস্য শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব এবং উধারবন্দের বিধায়ক (বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রীও) অজিত সিংহ উপস্থিত ছিলেন না। পুরসভার আগামী বৈঠকে তিন জনকেই শপথ গ্রহণ করানোর উদ্যোগ চলছে।