একেবারেই ভোটের বাজেট বানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এর প্রভাব পড়বেই আসন্ন লোকসভা ভোটে। সংসদে শুক্রবার কেন্দ্রীয় বাজেট প্রস্তাবের পর এটাই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। আর প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম বলেছেন, ‘‘এটা ভোট অন অ্যাকাউন্ট হয়নি। হয়েছে অ্যাকাউন্ট অফ ভোটস। অন্তর্বর্তী বাজেট না বানিয়ে দেওয়া হয়েছে পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রস্তাব।’’
ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কারের জনক, ১৯৯১ সালের পি ভি নরসিংহ সরকারের অর্থমন্ত্রী মনমোহন এ দিন বলেছেন, ‘‘এই বাজেটে আয়করে অনেকটা ছাড় দিয়ে মধ্যবিত্তদের খুশি করা হয়েছে। কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা হয়েছে। খুশি করার চেষ্টা চালানো হয়েছে গ্রাম ভারতকে। মে মাসের লোকসভা ভোটে অবশ্যই এই সবের প্রভাব পড়বে।’’ মনমোহন এই বাজেটকে ‘একেবারেই ভোটের বাজেট’ বলেছেন।
ও দিকে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম এই বাজেটকে ‘অ্যাকাউন্ট অফ ভোট্স’ আখ্যা দিয়ে, নোটবন্দির বছর ও তার পরের অর্থবর্ষে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার বাড়ার সংশোধিত সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, গত ৪৫ বছরে যেখানে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি হয়েছে মোদী জমানায়, তখন কী ভাবে ২০১৬-’১৭ এবং তার পরের অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হার অতটা বেড়ে যেতে পারে? আর সেটা কী ভাবেই বা সম্ভব নোটবন্দির বছরে?
সংশোধিত সরকারি পরিসংখ্যান গত কাল জানিয়েছে, নোটবন্দির বছরে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.২ শতাংশ। আর ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে তা ছিল ৭.২ শতাংশ। চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘নোটবন্দির যে বছরে দেশের আপামর মানুষ নাজেহাল হয়েছেন, মোদী জমানার সেই বছরেই কী ভাবে জিডিপি বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ হল?’’
আরও পড়ুন- ভোট বাজেট: কৃষক আর শ্রমিকের মন পেতে একগুচ্ছ ঘোষণা
আরও পড়ুন- ৫ লাখ পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ছাড়, ঊর্ধ্বসীমা না বাড়িয়ে ঘুরপথে মধ্যবিত্তকে স্বস্তি
এর পরেই চিদম্বরম তাঁর আর একটি টুইটে লিখেছেন, ‘‘তা হলে তো আমাদের আরও একটা নোটবন্দি দেখতে হবে। আর সেটা হয়তো হবে এ বার ১০০ টাকার নোট দিয়ে!’’
চিদম্বরমের তির্যক মন্তব্য, মোদী সরকার জিডিপি বৃদ্ধির হার সংশোধন করে তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বেকারত্বের হার বৃদ্ধির কথাটা মাথায় রাখেননি। তাঁর কথায়, ‘‘গত ৪৫ বছরে যেখানে দেশে বেকারত্বের হার সর্বাধিক, সেখানে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে, এটা বিশ্বাস করি কী ভাবে?’’
বিক্ষুব্ধ বিজেপি সাংসদ অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা মনে করিয়ে দিয়েছেন হিটলারের সহচর গোয়েবল্সের সেই কৌশল। মোদী সরকারকে ‘ঈশ্বর আশীর্বাদ করুন’ বলে শত্রুঘ্ন তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‘‘ইংরেজিতে একটা প্রবাদ রয়েছে। সব মানুষকে কিছু দিনের জন্য বোকা বানানো যায়। কিছু মানুষকে সব সময়ের জন্য বোকা বানানো যায়। কিন্তু সব মানুষকে সব সময়ের জন্য বোকা বানানো যায় না।’’
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ এই বাজেটকে ‘জুমলা বাজেট’ বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কৃষক ও যুব সম্প্রদায়কে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। এই বাজেট সাধারণ মানুষের কাঁধের বোঝাটা আরও ভারী করে দিল।’’